স্থানীয় সময় শনিবার কানাডার টরন্টোতে ‘বাংলাদেশ মাইনোরিটি রাইটস এলায়েন্স’-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ‘বাংলাদেশ মাইনোরিটি ওয়াচ’-এর প্রধান রবীন্দ্র ঘোষ।
আয়োজক সংগঠনের সেক্রেটারি সরোজ দাসের সঞ্চালনায় সংগঠনের সভাপতি অরুন দত্ত স্বাগত বক্তব্য দেন। সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, বাংলাদেশ ও কানাডার বিভিন্ন সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
সেমিনারে রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই দল এখন ক্ষমতায়। তবুও ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হ্রাস পাওয়া দূরের কথা, বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক হিন্দুকে প্রিয় মাতৃভূমি ছাড়তে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির জন্যে দায়ীদের বিচারও হচ্ছে না।”
যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি নব্যেন্দু বিকাশ দত্ত বলেন,“আইন করে লাভ হবে না। সমগ্র জনগোষ্ঠীকে সজাগ করতে হবে নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম অবাধে প্রতিপালনে।”
যুক্তরাজ্যে ‘সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট’-এর নেত্রী পুষ্পিতা গুপ্তা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
রাশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠক তরুন কান্তি চক্রবর্তী বলেন, “বিভিন্ন দেশের কর্মকাণ্ডের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে সহজেই অনুমান করা যায় যে, উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই সংখ্যালঘুদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথ সুগম রাখতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সেক্রেটারি ও ঐক্য পরিষদের আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী শিতাংশু গুহ তার বক্তব্যে নতুন প্রজন্মকে সেক্যুলার বাংলাদেশ রচনায় জোরদার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ওপর জোর দেন।
যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংঘঠক অজন্তা দেব রায় বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রেই কোরআন ও সুন্নাহ্র সমলোচনা না করার প্রসঙ্গ রয়েছে। তাহলে সেই দলটি কীভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করবে? আসলে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। সে ধারায় এখন মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে প্রায় সকলেই রাজনীতি করছেন। ভোটের রাজনীতিতেও তা আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
মন্ট্রিয়লের ঐক্য পরিষদ নেতা দিলীপ কর্মকার বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগকে সবচেয়ে কাছের বন্ধু মনে করি। অথচ বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকতে সবচেয়ে কম আক্রমণের শিকার হয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধরা। আওয়ামী লীগ আমলে সবচেয়ে বেশি হামলা হচ্ছে।”
আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথা শান্তি বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য প্রীতিবিন্দু চাকমা।
যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠক শুভ রায় বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে অনেক ভালো মানুষ আছেন। তাদেরকে আরও জাগ্রত করতে হবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রচনায় ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে।”
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক রেখা পাঠক, দস্তিদার ঘোষ, নাসিরুদ্দোজা, নাগরিক ঐক্যের আনোয়ার হোসেন মুকুল, বিধায়ক সেন, রন ব্যানার্জি, ড্যান ডোবস, সুশীতল রায় চৌধুরী, সুহার্তো চাকমা ও হিমাদ্রি সেখর।
সেমিনারে কানাডা ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের পর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |