আটলান্টায় গুলিতে নিহত রেজোয়ানের দাফন প্রবাসেই  

যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত রেজওয়ানের দাফন প্রবাসের মাটিতেই হবে।

রুমী কবির, আটলান্টা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2017, 10:20 AM
Updated : 21 Sept 2017, 10:20 AM

শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর ডোরাভিল এলাকার আত্তাকয়া মসজিদে নিহত জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানেই তার দাফন হবে বলে নিজ গ্রামের প্রতিবেশি আটলান্টায় বসবাসকারী আদনান সুমন জানিয়েছেন। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সুমন বলেন, “শুক্রবারে জানাজা শেষ হওয়ার পর নিউটন কাউন্টিতে আত্তাকয়া মসজিদের আওতাধীন নবনির্মিত গোরস্থানে দাফনের উদ্দেশে পরদিন শনিবার সকালে দাফন হবে।

মূলত শুক্রবারে দুপুর থেকে ওই গোরস্থানে যাওয়ার পথের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা যারপরনাই নাজুক অবস্থায় থাকে বলে সকলের সুবিধা বিবেচনা করে পরদিন শনিবার দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সুমন জানান।

জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে জর্জিয়ার সকল বাংলাদেশি প্রবাসীকে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।   

গত ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ডাউন টাউনে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া (৩৫) ও ক্যাশিয়ার রেজওয়ান (২০) বাড়ি ফেরার সময় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের তাদের ওপর গুলি চালায়।

গুলিতে নিজ গাড়িতেই মারা যান সাইফুল। মস্তিষ্কে গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত রেজওয়ানকে স্থানীয় গ্রেডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শুরু থেকে লাইফ সাপোর্টে থাকা রেজওয়ানকে চিকিৎসকরা  ১৪ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করেন।

রেজওয়ানের বাবা মোহাম্মদ শরীফুল্লাহ শুরু থেকেই লাশ বাংলাদেশে তার নিজ গ্রামে দাফনের কথা বলে আসছিলেন।

তার মরদেহ দাফনের জন্য রেজওয়ানের বাবা-মা গ্রেডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাঠানো স্পনসরপত্র নিয়ে আটলান্টায় আসার লক্ষ্যে রোববার বাংলাদেশের আমেরিকান দূতাবাসে দাঁড়ালেও ভিসা মেলেনি। পরের মাসে আবার যেতে বলেছে তাদেরকে।

ফলে মরদেহ বাংলাদেশে বাবার মার কাছে পাঠানোর ব্যাপারে প্রস্তুতি আরও জোরদার হয়ে ওঠে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে আকস্মিকভাবে সকল চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ থেকে টেলিফোনে বাবা তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের মরদেহ আটলান্টায় দাফন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।

২০ বছরের তরুণ রেজওয়ানের মরদেহ বর্তমানে নরক্রসের একটি ফিউনারেল হোমে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

এদিকে রেজওয়ানের দাফন ও চিকিৎসার আনুসঙ্গিক খরচ যোগাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে চলছে তহবিল সংগ্রহ।  

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ডোরাভিলের আত্তাকয়া মসজিদ এপর্যন্ত সাত হাজার ছয় শত ডলার, মোহাম্মদ জামান ঝন্টুর আহবানে বৃহস্পতিবার লিলবার্ন ক্যাফের তহবিল সংগ্রহের সভা থেকে তিন হাজার চার শত ডলার সংগৃহীত হয়েছে।

সেবা সংগঠন মানচিত্র ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রায় দুই হাজার এবং সাদমান সুমনের কাছে জনৈক ব্যবসায়ী এক হাজার ডলার দিয়েছেন বলে জানা গেছে। নিউ ইয়র্কের রেজওয়ানের বন্ধুরাও অর্থ সংগ্রহ করছেন, যেটি তারা সরাসরি বাবা মার কাছে পাঠিয়ে দেবেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে জর্জিয়ায় অনেকেই অর্থ সংগ্রহ করছেন প্রয়াত রেজওয়ানের জন্যে। সমস্ত অর্থ একত্রিত করে মরদেহের সৎকারের পর বাড়তি অর্থ তার বাবা-মায়ের কাছে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সংগঠকরা জানিয়েছেন।         

রেজওয়ান তিন মাস আগে বাংলাদেশ থেকে আটলান্টায় আসে। তবে ইমিগ্রেশন ভিসার বৈধ কাগজ না থাকায় চল্লিশ লক্ষ টাকা ঋণ করে ব্রাজিল, মেক্সিকো হয়ে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে করে ছয় মাসের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হয়েছে তাকে।

বাবা সৌদি আরবে কষ্টের কাজ করতেন। তাই রেজয়ান আটলান্টায় সাইফুলের ষ্টোরের কাজটি পাবার পরই বাবাকে আরবের চাকরী ছেড়ে দেশে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন এবং রেজওয়ান নিয়মিত দেশে টাকা পাঠাবেন বলে বাবাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন।

চার ভাই বোনের মধ্যে রেজওয়ান ছিলেন তৃতীয় সন্তান এবং দুই পুত্রের মধ্যে সে ছিল বড়। নিহত রেজওয়ানের বাড়ি বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার সোনাইমুরী অঞ্চলের আমিরাবাদ গ্রামে।

মৃত্যুর গত ৪ সেপ্টেম্বর তারিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নিজ টাইম লাইনে রেজওয়ান লিখেছে,

“আসলেই জীবন মানে একটা ভূমিকাহীন গল্প, যার প্রতিটা লাইন পড়া সহজ, কিন্তু বোঝা কঠিন।”

গত ২৬ অগাস্টের টাইম লাইনে লিখেছে, “একটা সময় সত্যি জীবন চলে না, কিন্তু আমরা চালিয়ে নেই। কারণ জীবন তো একটাই।”

আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!