সিডনির চিঠি: বাবা দিবস

সিডনিতে আজ  ‘বাবা দিবস’। আজ  এখানকার স্থানীয়রা মহাসমারোহে ‘বাবা দিবস’ পালন করছে।

নাইম আবদুল্লাহ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2017, 05:29 AM
Updated : 3 Sept 2017, 05:33 AM

গত সপ্তাহ থেকে শপিং সেন্টারগুলোতে বাবাদের জন্য বিশেষ মূল্য ছাড়ের পাশাপাশি ক্রেতা ছেলেমেয়েদের কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। আজ  দুপুরে খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোতে উপচে পড়া ভিড়।

আমি বছর দুই আগে থেকে দেশের টিভি চ্যানেলে রিপোটিং করছি। প্রথম দিকে কীভাবে ভিডিও ফুটেজগুলো ছোট করে ফাইল হিসেবে চ্যানেলে পাঠাব, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না।

আমার ছেলে আরিক ওর ক্লাসে বন্ধুদের সাথে ভিডিও প্রেজেন্টেশন ও স্লাইড শো করে। আমার স্ত্রী পরামর্শ দিল, আরিকের কাছ থেকে শিখতে। আমি প্রথমে গড় রাজি থাকলেও কাজের প্রয়োজনে ছেলের শরণাপন্ন হলাম।

আরিক আমার ল্যাপটপে অতি যত্ন সহকারে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডাউনলোড করে দিলো। তারপর হাতে-কলমে শেখালো, কীভাবে ক্যামেরার এসডি কার্ড থেকে ভিডিও ফুটেজ এনে ওগুলোকে জোড়া লাগিয়ে একটি ছোট্ট ফাইলে পাঠাতে হয়।

তারপর আমার সমস্যা দেখা দিলো, কীভাবে ভিডিওতে লোগো বসাবো। কিন্তু আরিক এই কাজটাও অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে করলো। ওর নিজেরও এই বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না। আমাকে অভয় দিয়ে বললো, “বাবা, চিন্তা করো না। আমি ওয়েব সাইট সার্চ করে তোমাকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে দেব।”

তারপর সে ঠিকই আমাকে অ্যাপ্লিকেশন খুঁজে দিলো। এবার শুরু হলো আরিকের কাছ থেকে আমার হাতে-কলমে শিক্ষা। আমি টেকনোলোজিতে মোটেই ভালো না। আরিক তার এই ডাম্প ছাত্রকে অনেক ধৈর্য সহকারে শেখাতে লাগলো। সে প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেয়।

আমি ঠিক তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অতি দ্রুত সব কিছু গুলিয়ে ফেলি। আরিক আবার শেখায় আমি একই প্রশ্ন তাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বার বার করি। সে হয়তো ক্লাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বসেছে, ঠিক তখনি আমার ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেল- “আরিক বাবা, সব কিছু ঠিক ছিল। হঠাৎ করে ভিডিও ক্লিপ মুছে গেছে। লোগো বসাতে গিয়ে সেভ করা লোগোই মুছে ফেলেছি” ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার স্ত্রী অ্যাসাইনমেন্ট করার সময় আরিককে বিরক্ত করার জন্য ভ্রু কুঁচকে থাকে। কিন্তু আমার কুচ পরোয়া নেহি ভাব। আমার কাজটাই যেন আগে।

আরিক মনে মনে বিরক্ত হলেও হয়তো ওর মা’র মতো বিরক্তি প্রকাশ করে না। হয়তো মনে মনে ভাবে, আমার বাবা যে এত ডাম্প, তা এই কাজ শেখাতে না এলে আমার অজানাই থেকে যেত।

আজ বাবা দিবসে আরিক বাবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা আর অফুরন্ত দোয়া। সে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা নিয়ে বেঁচে থাকুক- এই শুভ কামনা।

লেখক: সিডনি প্রবাসী ও সাংবাদিক

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!