যখন এই শব্দ দু’টি সম্বন্ধে কিছু ধারণা হলো, তখনও কিন্তু আমার সৌভাগ্য হয়নি এই বাস্কারদের উপস্থাপনা দেখার। সত্যি কথা কি, এই পৃথিবীতে অনেক ধরনের কাজের কথা শুনেছি। কিন্তু এই উপায়েও যে টাকা উপার্জন করা যায়, তা এই দেশে না এলে হয়তো কখনই আমার জানা হতো না।
সেদিন কাজ থেকে বাসায় ফেরার সময় দেখতে পেলাম, অনেকগুলো মানুষ জড়ো হয়ে কি জানি উপভোগ করছে। অনেকদিন ধরে ইচ্ছে ছিলো, বাস্কারদের উপস্থাপনা দেখার, কিন্তু কখনও সময় করে উঠতে পারিনি।
সেইদিন তাদের পুরো উপস্থাপনা দেখে এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে যখনই সময় পাই, তখনই ছুটে যাই সেই জায়গায় প্রতি শনিবার বা রবিবারে। সাধারণত এই দলটি প্রতি শনিবার ও রবিবারে এই পর্যটন জায়গায় স্ট্রিট পারফরমেন্স করতে আসে।
এইভাবেও যে টাকা উপার্জন করা যায়, তা আগে জানা ছিলো না। কি অদ্ভুত দেশ তাই না! যে যেভাবে পারছে, সেইভাবে টাকা উপার্জন করছে। কেউ কিন্তু বসে নেই। আর তাছাড়া এইভাবে যদি টাকা উপার্জন করা যায়, তাহলে মন্দ কি! এক একটি মানুষের প্রতিভা এই ‘বাস্কিং’-এর মাধ্যমে ফুটে ওঠে।
আমি আগেই বলেছি, এই শব্দটির সাথে আমি কিঞ্চিৎ পরিচিত ছিলাম। কিন্তু এই মানুষটির মাধ্যমে আরও অনেক কিছু জানতে পারলাম। ‘বাস্কিং’ হচ্ছে এমন একটি পারফরমেন্স, যেটি সাধারণত জনবহুল জায়গায় করা হয়। এতে করে সব ধরনের জনগণ দেখতে পারে বা উপভোগ করতে পারে।
সবসময় তো সিনেমা বা নাটকে বাস্কিং দেখে অভ্যস্ত, কিন্তু এই প্রথম সরাসরি দেখতে পেলাম। তবে বেশিরভাগ দেশে এদেরকে সম্মান জানানো হয় টাকা বা খাদ্য বা অন্যান্য উপহারের মাধ্যমে। এমনকি এই ধরনের পারফরমেন্সে মাঝে মধ্যে নারী বা শিশুদেরকেও দেখা যায়।
পারফরমেন্স বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- একরোব্যাক্টিস, অ্যানিমেল ট্রিকস্, বেলুন টুস্টিং, ক্লাউনি, কমেডি, গান, নাচ, ফায়ার স্কিল, জাদু, মুখাভিনয়, পেইন্টিং বা স্কেচিং, স্ট্রিট থিয়েটার, জাগলিংগ, কবিতা আবৃত্তি ও মিউজিক্যাল পারফরমেন্স প্রভৃতি।
দ্বিতীয়ত, ‘ওয়াক-বাই-অ্যাক্ট’। এটাতে বাস্কাররা মিউজিক পারফর্ম করে এবং এইখানে কোনও নিদির্ষ্ট সময় নেই মিউজিক শেষ বা শুরু করার। বরং জনগণ অনেক সময় নিয়ে উপভোগ করে আনন্দের সাথে। তবে ‘ওয়াক-বাই-অ্যাক্ট’ সবচেয়ে জনপ্রিয়, যেটি লন্ডনে সবসময় দেখা যায় উল্লেখযোগ্য স্থানে বা পর্যটন স্পটে।
আর সর্বশেষ ‘স্টপলাইট পারফরমার্স’। তবে এটি আমেরিকাতে বেশি দেখা যায়।
এই কথাটি খুবই হাস্যকর মনে হবে, কিন্তু তারপরও আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। বাস্কারদের টাকা সংগ্রহ করার ধরনটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। বাস্কাররা ডোনেশন বা টিপস পাবলিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন কনটেইনারের মাধ্যমে। উদাহরণ দেই। ‘ওয়াক-বাই-অ্যাক্ট’ যারা করে, তারা মূলত ইনস্ট্রুমেন্ট কেস বা ক্যান কিংবা বড় বাক্সের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করতে থাকে পারফরমেন্স চলাকালে।
বাসায় বসে না থেকে প্রতিভা উপস্থাপনের মাধ্যমে যদি টাকা উপার্জন করা যায়, তাহলে তো খুবই ভালো। কিছুটা হলেও বেকারত্বের পরিমাণ তো লাঘব হয়। আমরা কি পারি না এই ধরনের সিস্টেম বা বাস্কিং আমাদের দেশে চালু করতে?
হয়তো আছে গ্রামেগঞ্জে, কিন্তু শহরে খুব একটা বেশি দেখা যায় না। কারণ এই ধরনের পেশা আমাদের দেশের মানুষরা হেয় চোখে দেখে। হেয় চোখে দেখার কি আছে বলুন? উন্নত দেশগুলোতে কি বাস্কিং হচ্ছে না?
এই বাস্কিং-এর মাধ্যমে পর্যটকরা যে আকৃষ্ট হচ্ছে, তা আমাদের অজানা ছিলো। আমাদেরও কিন্তু অনেক পর্যটন স্পট রয়েছে, যেখানে ইচ্ছে করলে আমরা আমাদের দেশিয় সঙ্গীত বা লোকসঙ্গীত দিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারি।
লেখক:
প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন |