বিদেশ ভালো: জুয়ার রাজ্য যুক্তরাজ্য!

ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! তুমি এতো খারাপ! মনে পড়ে রূপনগর নাটকের ডায়ালগ?

রিনভী তুষার,  জার্মানির বার্লিন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2017, 06:17 AM
Updated : 14 August 2017, 06:17 AM

খালেদ খানের এই ডায়ালগ তখন সবার মুখে মুখে।  সেই নাটকে প্রথম দেখেছিলাম ‘ক্যারাম জুয়া’। বুঝেছিলাম, জুয়া ব্যাপারটায় ঝামেলা আছে। আসলে ঝামেলা না। এটা বাংলাদেশে যৌনতার মতোই অস্পৃশ্য একটা বিষয়।

জুয়া খারাপ। লটারি ভালো। আমরা বাংলাদেশে এমনটাই জানি। তাই গলা খুলে গাই ‘যদি লাইগা যায়, একবার লাইগা যায়’। আর দশ টাকায় চল্লিশ লাখের স্বপ্ন কিনি।

একটা সময় ছিলো যখন চল্লিশ লাখ টাকা বিজয়ীর ছবি দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপানো হতো। সাথে থাকতো নানা রকম টক-ঝাল-মিষ্টি মিথ। যেমন- এক গরিব ইলেকট্রিশিয়ান থাকে বস্তিতে। এক বাসায় গেছে কারেন্টের লাইন ঠিক করতে। তার মজুরি দশ টাকা।

বাসার মালিকের কাছে ভাংতি নাই। তিনি বলেন- টিকিট নিবা নাকি মিয়া? দশ টাকা দামের টিকেট। সেই ইলেকট্রিশিয়ান রাজি হয়ে যায়। ফলাফলের দিন বাড়ির মালিকের মাথায় হাত। ইলেকট্রিশিয়ান লাখপতি। সেই ইলেকট্রিশিয়ান এখন কই থাকে? কী করে? কে জানে!

কিন্তু যুক্তরাজ্যে? আহা! ২০১২ সালের জরিপ বলে ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৬১ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে জুয়ার সাথে জড়িত।

জুয়ার গল্প হবে, কিন্তু ইতিহাস জানা হবে না- এ কেমন বিচার! চলেন ইতিহাস মুখস্ত করি।

ধরেন। চোখ বন্ধ করে ধরেন। মানে, জুয়ার জন্ম কত বছর আগে এবং কোথায়? সেটা নিয়ে একটা বাজি ধরেন। এবার ফলাফল মিলিয়ে নেন। সততার সাথে ফলাফল মেলান। পুরস্কার আত্মতুষ্টি।

জুয়ার জন্ম যীশু খ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় ২ হাজার ৩০০ বছর আগে, চীন দেশে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা যীশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় দুই হাজার বছর আগে ব্যবহার করা বেটিং স্লিপও খুঁজে পেয়েছেন। সেই স্লিপ ছিলো এক ধরনের বিঙ্গো টাইপের গেমের জন্য তৈরি।

ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন, সেই জুয়া ছিলো সরকারী। জুয়ার টাকা ব্যবহার করা হয়েছিলো দা গ্রেট চায়নিজ ওয়াল তৈরিতে। জুয়ার টাকায় সরকারী স্থাপনা নির্মাণের এমন উদাহরণ ইতিহাসে ভুরি ভুরি। এমনকি দুনিয়া কাঁপানো বিশ্ববিদ্যালয় হাভার্ড এবং ইয়েল তৈরি হয়েছে জুয়ার ফান্ডে।

জুয়ার ইতিহাস এর চরিত্রের মতোই বিচিত্র। গ্রিক কবি সফোক্লিসের দাবি, গ্রিকে একজন মিথোলজিকাল চরিত্র সর্বপ্রথম ট্রয় অবরোধের সময় ডাইস আবিষ্কার করেন। এই দাবি অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব পাঁচশ’ সালে  ডাইসের প্রচলন। ডাইস হলো অনেকটা আমাদের লুডু খেলার ছক্কার মতো। কিন্তু প্রাচীন মিশরের এক কবর হতে এক জোড়া ডাইস উদ্বার করা হয়। সেই ডাইস জোড়া তৈরি হয়েছিলো আনুমানিক  খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার সালে।

তবে গ্রিক এবং রোমনরা জুয়াকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। তারা সবকিছুর উপর বাজি ধরতো। সেই সময় আইন করে রাস্তার পাশের বাজির উপর কড়াকড়িও আরোপ করা হয়। আইন ছিলো, জুয়া খেলা যাবে না। ধরা পড়লে যতো টাকা বাজি ধরা হয়েছে, তার চারগুণ জরিমানা।

রোমানরাও কম যায় না। তারা আবিষ্কার করলো চিপসের। রক্ষীরা জুয়াড়িদের ধরলে তারা বলতো- আমরা তো নগদ অর্থের জন্য খেলছি না। খেলছি চিপসের জন্য। আর সেই চিপস জমা দিয়ে পরে জুয়াড়িরা পেতো টাকা। এখনকার ক্যাসিনোগুলোর চিপস সেই রোমানদেরই আবিষ্কার।

জুয়া বলতে বাংলাদেশে আমরা সাধারণত বুঝি তাস পেটানোকে। চারজন গোল হয়ে গামছা পেতে তাস পেটাচ্ছে। মাঝখানে রাখা কিছু রোয়া ওঠা নোট। ধারণা করা হয়, এই তাসের জন্ম চায়নাতে। নবম শতাব্দীর শুরুর দিকে চায়নিজরা তাস খেলা শুরু করে।

১ হাজার ৪০০ সালে ইতালিয়ানরা শুরু করে টু প্লেয়ার কার্ড গেম ব্যাকারাট। এই খেলা ইতালি থেকে ছড়িয়ে পড়ে ফ্রান্সে। তবে ক্যাসিনোর জনপ্রিয় কার্ড গেমের জন্ম কিউবাতে। সেটা আবার আমেরিকাতে পাচার হয় ব্রিটিশদের হাত ধরে।

কারো মতে তাসের খেলা ‘ব্ল্যাকজ্যাক’-এর জন্ম স্প্যানিশ খেলা ভেনটিউনা হতে। ‘ব্ল্যাকজ্যাক’, জম্পেশ এই নাম দেওয়া আমেরিকানদের। ১৯৩০ সালে নেভাদার এক ক্যাসিনোতে ‘ব্ল্যাকজ্যাক’ প্রথম প্রোমোট করা হয়। সে সময় বাজির দর ছিলো এক ডলারের বিপরীতে দশ ডলার।

১৬৩৮ সালে প্রথম ক্যাসিনো চালু হয় ইতালিতে। ঊনিশ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপ-আমেরিকা জুড়ে শুরু হয় ক্যাসিনোর ট্রেন্ড। মিসিসিপি জুড়ে বেড়ে যায় বাষ্প জাহাজের আনাগোনা। একটু ধনী ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কৃষকরা জুয়ার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। অগণিত মানুষ সেই প্রেমের আগুনে আর  হতাশায় পুড়ে গেছে। আর সেই পোড়া ছাইয়ের উপর দাঁড়িয়ে আজকের ড্রিম সিটি ‘লাস ভেগাস’।

তবে জুয়ার জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় গেমের নাম ‘রুলেট’। এর জন্ম প্যারিসে। ১৭৯৬ সালের কোনো এক সময়ে জনপ্রিয় এই গেম ক্যাসিনোগুলোতে চালু হয়।

মোটাদাগে এই হলো জুয়ার গ্লোবাল ইতিহাস। কি ভয়ঙ্কর রকম বিরক্তিকর তাই না? আসেন আরেকটু বিরক্ত করি। এবার বলি যুক্তরাজ্যের জুয়ার গল্প।

ইউনাইটেড কিংডম, যুক্তরাজ্য। (যদিও জানেন তাও আবার জানালাম। জ্বী ধন্যবাদ!)। অনেক বছর আগের কথা। তখন লন্ডনের বিলাসবহুল এলাকা ‘সহো’র মানুষরা মল ত্যাগ করে ঘরে, বালতিতে। আবার সেই বালতি নিজ হাতে উপুর করে খালি করে নিজেরই, বাসার সামনে। যদিও তার অনেক আগে থেকেই আমরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে আদব-লেহাজ শিখছি তো শিখছিই।

জুয়া ছিলো তখন মূলত বড়লোক ব্রিটিশদের আভিজাত্যের প্রতীক। বড়লোকেরা বাজির জন্য তখন ঘোড়া দৌড়াতো আর মোরগ-মুরগি লড়াই করে মরতো। গরিব ব্রিটিশরা তখন গরিব রোমানদের মতো ছক্কা-লুডু খেলে।

রাজা অষ্টম হেনরি যুক্তরাজ্যে তার আমলে জুয়াকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেন। তার ধারণা, জুয়া সৈনিকদের মনোযোগ নষ্ট করে। কিন্তু ১৫৬৯ সালে এই রাজারই কন্যা, রানী প্রথম এলিজাবেথ ইংল্যান্ডের রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ন্যাশনাল লটারি চালু করেন। এরপর বাকিটা ইতিহাস। সেই ইতিহাসেরই অংশ আমার আজকের লেখা।

এই ‘ইতিহাস’ করে করে আপনার পিণ্ডি চটকানোর ইচ্ছা নাই। আরও সংক্ষেপে বলি। এখানে বাজির মূলে এখন ফুটবল। তারপর ঘোড়া দৌড়। তারপর কুকুর দৌড়। ঘোড়া দৌড় এখনও আভিজাত্যের প্রতীক। বুড়ো রানীর জোয়ান ঘোড়া প্রতি বছর দৌড়ায় রয়াল আসকটের রেইসকোর্সে। তাছাড়া শত বছর পুরনো নিউ মার্কেট, এপসম এসব রেইসকোর্স এখনও চলছেই। এদেশে ঘোড়া দৌড়ের সবচেয়ে বড়দিন গ্রান্ড ন্যাশনাল। সেদিন গোটা যুক্তরাজ্যই ঘোড়া হয়ে বাজির পেছন দৌড়ায়।

কুকুররা মূলত দৌড়ায় শ্রমিক শ্রেণির জন্য। এজন্য এসব রেস মূলত শুরু হয় সন্ধ্যায়। তবে জাতে এইসব হাউন্ডরা কিন্তু শ্রমিক বা মালিক কারও জন্যই দৌড়ায় না। দৌড়ায় নকল খরগোশের পেছনে। একটা নকল খরগোশ ছুটে আগে আগে। আর কুকুরদের সেই খরগোশ ধরতে জীবন বাজি রেখে ছুট। তবে যান্ত্রিক গোলযোগে যদি মাঝ রাস্তায় খরগোশ থেমে যায় তবে কুকুররাও থেমে যায়। দৌড়ায় না।

এখানে কুকুররা ঘোড়ার তুলনায় অনেকটা প্র্যাকটিকাল। ঘোড়সওয়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলেও রেসে ডিসকোয়ালিফাইড সেই ঘোড়া দৌড়ানো বন্ধ করে না। আপন মনে দৌড়ে যায়। যেন ‘আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ’!

তবে কুকুর দৌড়ের কাটতি এখন পড়তির দিকে। ১৯৪৬ সালে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ কুকুর দৌড়ে বাজি ধরতো। এখন সেই সংখ্যা কমে প্রায় দুই মিলিয়নের মতো।

ব্যবসার দিক থেকে জুয়া ছাড়িয়ে গেছে নিজেকেও। ১৯০২ সালে শুইন্ড,প্যানিংটন এবং আর্থার বেন্ডির মিলে চালু করেন প্রথম জুয়ার দোকান। নাম দেন ‘ল্যাডব্রোকস’। এই কোম্পানির ২০১৫ সালে আয় ছিলো দুই বিলিয়ন পাউন্ড। তবে ইউকে মাকের্টে নাম্বার ওয়ান জুয়ার কোম্পানি- উইলিয়াম হিল। যার আয় ছিলো গত বছর প্রায় ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন পাউন্ড। অনলাইন আর অফলাইন মিলিয়ে যুক্তরাজ্যে জুয়ার বাজার প্রায় একশ’ বিলিয়ন পাউন্ডের মতো। ১ পাউন্ড ১০৫.৬০ পয়সা। এবার টাকায় গোটা অংকটা হিসাব করে নিন।

জুয়ার দোকানদারদের ব্যবসার একটাই মাল, একটাই মশলা- ঝুঁকি। এই ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাজ্যের গরিবরা। গোটা লন্ডন ঘুরলে যে পরিমাণ জুয়ার দোকান পূর্ব লন্ডনে চোখে পড়ে, সেই পরিমাণ চোখে পড়ে না ওয়েস্ট লন্ডনে বা বড়লোক পাড়ায়। কারণ গরিব তার গরিবী মেটানোর জন্য ঝুঁকি নেয়। ঝুঁকি নিয়ে নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত পাঁচ লাখ লোক জটিল জুয়া সমস্যায় আক্রান্ত। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

গত বছর বিবিসি প্যানারোমায় উঠে এসেছিলো এমনই এক পরিবারের কাহিনী। যেই পরিবারের কর্তা জুয়ায় সব হারিয়ে আত্মহত্যার রাস্তা খুঁযে নিয়েছেন। তার স্ত্রী-সন্তানদের কথা একবারের জন্যও ভাবেননি। বিবিসি সেখানে বলেছে, জুয়ার মেশিনে জুয়া খেলার নেশা ক্রাক কোকেইনের চেয়েও ভয়ংকর।

যুক্তরাজ্যে জুয়া আর অপরাধ যেন এক ফুলে দুই পোকা। এর সাথে আছে সব ধরনের অপরাধের সম্পর্ক। চুরি, ছিনতাই, ভিক্ষা, জালিয়াতি, মাদক পাচার, পতিতাবৃত্তি-এসব সামাজিক অপরাধের অন্যতম প্রধান জন্মদাতা ‘জুয়া’।

বাঙালিরা কোথায় নাই? বার্লিনের যৌনপল্লী থেকে লন্ডনের জুয়ার টেবিলে। যুক্তরাজ্যে বাস করা বাঙালিরা মোটেই পিছিয়ে নেই জুয়ার কারবারে। পূর্ব লন্ডনের ‘আপটন পার্ক’, ‘ইস্ট হ্যাম’- এর জুয়ার দোকানে একটু ঢু মারলেই দেখা মিলবে বাঙালির। এই রাজ্যে বাঙালি নারী-পুরুষের রয়েছে অনেকটা সহাবস্থান। কেউ পরিবারকে লুকিয়ে, কেউবা স্বামী-স্ত্রীসহ খেলে যাচ্ছেন প্রাণঘাতি জুয়া।

কথা বলেছিলাম এক বাঙালির সাথে। বয়স ২৬ কী ২৭। সারা মাসের আয় প্রায় ১ হাজার ৪০০ পাউন্ড। মাত্র আধা ঘণ্টায় উড়িয়ে দিয়েছেন।

জানতে চাইলাম কতো জিতলেন?

-পাঁচ পাউন্ড।

বলেই পাঁচ পাউন্ডের নোটটাকে কুঁচি কুঁচি করে ছিঁড়লেন। উড়িয়ে দিতে দিতে বললেন, “যারে রানী উইড়া যা।”

নোটের গায়ে রানীর ছবি। বেচারির জন্য খারাপই লাগলো।

দেখা মিললো আরেক ভয়ঙ্কর বাঙালি জুয়াড়ির সাথে। জুয়ার নেশায় যিনি বিক্রি করে দিয়েছেন লন্ডনের নিজের বাড়ি।

তবে সব দুঃখের মাঝেও বিনোদন থাকে। এক বাঙালি, বাড়ি সিলেট। যথেষ্ট ধর্মপ্রাণ। টুপি মাথায় রেখেই জুয়া খেলে যাচ্ছেন। ইংরেজিতে কথা চালিয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর বাংলায় কথা শুনেই পালিয়ে যেতে চাইলেন। আমি পেছন পেছন গেলাম। কিন্তু ভদ্রলোক মহা শেয়ানা। চট করে জুয়ার দোকান থেকে বের হলেন না। শেয়ালের মতো মাথা বের করে আশেপাশে নজর বুলিয়ে বের হলেন।

বের হতেই কথা বলার চেষ্টা করলাম আবার। পরিষ্কার ‘কমলালেবু’র ভাষায় কথা বললেন। জানলাম উনার সংসার চলে জুয়ার পয়সায়। সৃষ্টিকর্তার নাকি উনার দিকে বিশেষ নজর আছে। জুয়ার দোকানে ঘুরলে দেখা মেলে এমন হাজারও জুয়াড়ির। দেখা যায় স্ত্রী-সন্তান বাইরে দাড়িয়ে কাঁদছে, আর জুয়া রোগে আক্রান্ত স্বামী জুয়া যন্ত্রের মুখে পুরে দিচ্ছে হাজার হাজার পাউন্ড।

জুয়ার সবই কি খারাপ? ভালো কিছুই নেই? একটা বিশ্বাস হবে না টাইপ গল্প বলি। ১৯৭৩ সালের কথা। পয়সার অভাবে একটা কোম্পানি প্রায় যায় যায়। ব্যাংকে জমা মাত্র পাঁচ হাজার ডলার। কোম্পানির টাইটানিক অবস্থার আগেই সিইও সাহেব ফ্রেড স্মিথ নিলেন এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত। পাঁচ হাজারের পুরোটা পকেটদাবা করে চলে গেলেন লাস ভেগাস। জুয়ার জাদুতে পাঁচ হাজার বদলে গেলো ২৭ হাজারে। এই কোম্পানির কর্মী সংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে তিন লাখের কাছাকাছি। চাকরি দেবার দৌড়ে আমেরিকায় এর অবস্থান নবম। কোম্পানির নাম- ফেডেক্স। নাম তো শুনাই হোগা..!

তবে ব্রিটিশদের রক্তে জুয়া। জুয়া খেলার বিষয়ও বেশ অদ্ভুত। যেন বাদ যাবে না একটি টপিকও। যেমন, এই বছর ক্রিসমাসে কেমন ঠাণ্ডা পড়বে? বরফ পড়বে কি পড়বে না? প্রিন্স উইলিয়ামের বাচ্চার নাম কী রাখা হতে পারে? নেক্সট জেমস বন্ড কে? ব্রেক্সিট হবে কী হবে না?

নোয়াখালী বিভাগ চাই..নাকি কুমিল্লা বিভাগ? নাকি ময়নামতি? ব্রিটিশদের যদি এই ইস্যুটার ওজন বোঝানো যায়, তবে তারা নিশ্চিত- এটা নিয়েও তারা জুয়ার খেলায় মেতে উঠবে। আর এভাবে চলছেই চলবে এই জুয়া….।

হোয়েন ফান স্টপস, স্টপ!  মানে, ‘শেষ তো আনন্দ! জুয়া বন্ধ।’ এটা সিগারেট প্যাকেটের গায়ের সংবিধিবদ্ধ সর্তীকরণের একটা টাইপ জুয়ার দোকানের জন্য। 

যুক্তরাজ্যে জুয়ার মার্কেট যথেষ্ট কড়াকড়ি থাকলেও এরই ফাঁক গলে ঘটে যাচ্ছে হাজারটা অপরাধ। রাস্তায় বসে পড়ছে হাজার হাজার পরিবার। এসব জুয়াড়িদের মটো হচ্ছে- ‘হোয়েন ফান স্টপস, স্টার্ট অ্যাগেইন।’

ইংরেজিতে একটি কথা আছে- “Nobody has ever bet enough on a winning horse.”  

এই মন্ত্রেই চলছে জুয়ার রাজ্য- যুক্তরাজ্য।

লেখক: গবেষণা আর লেখালেখির চেষ্টা করেন

ছবি: রয়টার্স 

লেখকের ই-মেইল: kurchiphool@gmail.com

রিনভী তুষারের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!