জাদুর ব্রিজের কাহিনি

ছোটোবেলা থেকে সবারই অনেক ধরনের স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নগুলো কেউ পূরণ করতে পারে আবার কেউ পারে না। ঠিক আমারও অনেকগুলো স্বপ্নের মধ্যে একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে লন্ডনে এসে।

শাফিনেওয়াজ শিপু, যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2017, 12:42 PM
Updated : 12 July 2017, 12:58 PM

মুভি বা সিনেমা, নাটক ও গল্পের বইয়ে পড়ে বা দেখে আসছি টাওয়ার ব্রিজকে। দেখতে দেখতে আরও অনেকগুলো স্বপ্নের সাথে তৈরি হয়েছিলো টাওয়ার ব্রিজে বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় অবকাশ যাপনের। তাই যখন লন্ডন এলাম তখন থেকেই এখানে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে কিছু ধারণা নিয়েছিলাম টাওয়ার ব্রিজটি সম্পর্কে।

টাওয়ার ব্রিজ আমার কাছে ‘জাদুর ব্রিজ’। যতোবার সেখানে গিয়েছি ব্রিজের সৌন্দর্য উপভোগ করে ফিরে আসতে আসতেই সে আমাকে আবার আকর্ষণ করেছে। যেন ফিরে আসার সময় পিছু ডেকে বলেছে- কবে আসবে আবার! শুধু আমি কেন, কেউ যদি লন্ডন আসার পরিকল্পনা করে তবে ঠিক ঠিকই তার ভ্রমণ তালিকায় টাওয়ার ব্রিজ জায়গা করে নিবে।
লন্ডনে আসার পর, এক মুহূর্তও তর সয়নি আমার টাওয়ার ব্রিজে যেতে। দিনের বেলায় ভালো তো লাগেই, কিন্তু রাতে দেখলে সত্যি একে মনে হয় জাদুর জগৎ থেকে উঠে আসা কিছু একটা!
টাওয়ার ব্রিজেই ধরে রাখা আছে লন্ডনের ঐতিহ্য ও ইতিহাস। ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ওয়েস্ট মিনিস্টার ব্রিজ, লন্ডন আই, লন্ডন ব্রিজ ইত্যাদির মতো টাওয়ার ব্রিজের সৌন্দর্যও প্রতিদিন উপভোগ করেন হাজার হাজার দর্শনার্থী।
টেমস নদীর ওপরে অবস্থিত এই টাওয়ার ব্রিজের মতো এতো সৌন্দর্য ও খ্যাতি আর কোনও দেশের ব্রিজে নেই, যা আপনাকে আর্কষণ করবে অদ্ভুত সৌন্দর্যের টানে। লন্ডন পৌঁছানোর পরদিনই টাওয়ার ব্রিজ দেখতে ছুটেছিলাম দুই বন্ধুকে নিয়ে। স্ট্র্যাটফোর্ড থেকে জুবলি লাইনে করে সরাসরি লন্ডন ব্রিজ এলাকায় নেমেছিলাম। তারপর কিছুক্ষণ হাঁটার পর যখন দূর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম টাওয়ার ব্রিজটি তখন পর্যন্ত আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না।
এরপর ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করেছিলাম। আর মনে আছে নির্বাক হয়ে লন্ডন দেখছিলাম; লন্ডন! প্রাচীন নগরী লন্ডন! আর টেমস! ব্রিজের ওপরে উঠার জন্য সিঁড়ি ও লিফটের ব্যবস্থাও রয়েছে।

আমার আরো বেশি ভালো লেগেছে ব্রিজের রংয়ের খেলা। লাল, সাদা ও নীল এই তিনটি রংয়ের সম্বন্বয়ে টাওয়ার ব্রিজটি। তবে টিউব, বাস ও ট্যাক্সি যেকোন যানবাহনে করে আপনি খুব সহজে এই স্থানটিতে আসতে পারবেন।

আরেকটি ‘লন্ডন ব্রিজ’ও কিন্তু ‘টাওয়ার ব্রিজে’র পাশেই। পাশাপাশি হওয়ায় পর্যটকরা অনেক সময় দুই ব্রিজের নাম গুলিয়ে ফেলেন। এমনকি ছোটোবেলা থেকেই আমিও টাওয়ার ব্রিজকেই লন্ডন ব্রিজ হিসেবে চিনে এসেছি।

টাওয়ার ব্রিজের সবচেয়ে বড় আকর্ষণের একটি হচ্ছে নিচ দিয়ে জাহাজ চলার সময় এটি ভাগ হয়ে যায় বা আলাদা হয়ে উপরে উঠে যায়।

টাওয়ার ব্রিজের বয়স ১২০ বছরের বেশি, ১৮৯৪ সালে তৈরি। টেমস নদীর ওপরের এ ব্রিজটি ২৪৪ মিটার লম্বা। প্রস্থে এটি ৩২ মিটার। প্রতি টাওয়ারের উচ্চতা ২১৩ মিটার। সমান দুটি পাটাতনে বিভক্ত এই টাওয়ার ব্রিজের মাঝখানের দূরত্ব ২০০ ফিট। প্রতিদিন গাড়ি ও সাইকেলে করে ৩০-৪০ হাজার লোকজন পারাপার হয় ব্রিজ দিয়ে।

টাওয়ার ব্রিজের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রয়েছে- স্পিড ক্যামেরা, গাড়ির ওজন এবং উচ্চতা পরিমাপের ক্যামেরা। তাছাড় ব্রিজ পেরোনোর সময় গাড়ির গতিবেগ সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটারের বেশি গেলেই আপনাকে ধরবে পুলিশ!

প্রিন্স অফ ওয়েলস্ পরবর্তিতে সপ্তম এডওয়ার্ড এবং তার স্ত্রী প্রিন্সেস অব ওয়েলেস বা আলেকজান্দ্রা অব ডেনমার্ক ১৮৯৪ সালের ৩০শে জুন এটি অফিসিয়ালি উদ্বোধন করেন।

টাওয়ার ব্রিজের টিকেটের মূল্য খুব একটা বেশি নয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকেটের মূল্য ৯ পাউন্ড ৮০ সেন্টস আর ৫ থেকে ১৫ বছরের শিশুদের টিকেটের মূল্য ৪ পাউন্ড ২০ সেন্টস। এর কমবয়সী শিশুদের জন্য কোনও টিকেট লাগে না।

এমনকি অনলাইন থেকেও আপনি টিকেট বুকিং দিতে পারবেন। এছাড়াও রয়েছে রিভার ক্রুজের ব্যবস্থা যাতে করে আপনি টেমস্ নদী ও একসাথে দুটো ব্রিজের সৌন্দর্য দেখতে পারেন। লন্ডনের অন্যতম আইকন টাওয়ার ব্রিজ দেখলে আপনিও আমার সাথে সহমত হবেন যে- এটি একটি জাদুর ব্রিজ।

লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী     

ই-মেইল: topu1212@yahoo.com

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!