সবাই বলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশাল মিডিয়া নাকি এই প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কিন্তু আমি বলবো, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আমরা প্রবাসীরা পরিবারকে কাছে পাচ্ছি প্রতি মুহূর্তে, প্রতিক্ষণে। বলতে গেলে, পরিবারের সাথে এবারের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছি শুধুমাত্র এই সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে, মানে- স্কাইপি, ভাইবার ও ইমোর মাধ্যমে।
এই প্রথম কোনো ক্লাস বা কাজ ছাড়াই ঈদ পালন করলাম পরিপূর্ণভাবে। যার কারণে এবারের ঈদটি একটু ব্যতিক্রম মনে হয়েছিলো। চেষ্টা করেছি পুরো দিনটি ভালোভাবে কাটানোর জন্য কিন্তু তারপরও কেন জানি বার বার মনে পড়ছিলো পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কথা। আসলে কিছু করার নেই, পরিবেশের সাথে নিজেকে তো মানিয়ে চলতে হবে।
তবে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আমরা প্রবাসীরা কিছুটা হলেও ঈদ পালন করতে পারছি পরিবারের সাথে। স্কাইপি, ভাইবার, ম্যাসেঞ্জার ও ইমো- এই সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আজকে আমরা প্রবাসীরা দূর থেকে বসেও পরিবারের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারছি।
এখানেও এবার চাঁদ রাতের দিন বের হয়েছিলাম মেহেদি দেওয়ার জন্য। যেহেতু আমাদের দেশে এই মেহেদি দেওয়াটা খুবই প্রচলিত। মেহেদি ছাড়া তো ঈদ চিন্তাই করা যায় না। এরপর ভোর পাঁচটা পর্যন্ত রান্না করলাম বিভিন্ন ধরনের খাবার, যেমন- কালাভুনা, পোলাও এবং ঝাল মাংস ইত্যাদি। রান্না করেছি ঠিকই, কিন্তু তারপরও মিস করছি মায়ের হাতের সুস্বাদু ও লোভনীয় খাবার।
মা’কে ফোন কললাম স্কাইপিতে। বললাম, এই প্রথম প্রবাসের মাটিতে ঈদ মনে হচ্ছে। আমার মা তো অবাক হয়ে গেলো তার মেয়ে রান্না করছে শুনে। আসলে সব বাবা-মায়েরা মনে করে তাদের ছেলেমেয়েরা যতই বড় হোক না কেন, তাদের কাছে আমরা বরাবরই ছোট।
সকাল হলো এবং ঠিক বাংলাদেশের মতো নতুন জামা-কাপড় পরে স্কাইপির মাধ্যমে বাসার সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালাম। এমনকি আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকেও ঈদের শুভেচ্ছা জানালাম। এইভাবে সকালটা পার করলাম বাংলাদেশে সবার সাথে কথা বলে।
আমরা যে বাসায় এখন থাকি, সেই বাসায় সকাল থেকেই মেহমান আসা শুরু হয়েছিলো। যার কারণে বেশ উৎসব উৎসব মনে হচ্ছিলো। সেই মেহমান আসা দেখে বাংলাদেশের কথাও মনে পড়ে গেলো। ঠিক এই রকমই আমাদের বাসায় সকাল থেকে মেহমান আসতো এবং পুরো বাড়ি জমজমাট হয়ে থাকতো। সেই মুহূর্তগুলো মিস করছি।
এভাবেই কেটে গেলো আমার ঈদের দিনটি। এরপর শুরু হয়ে গেলো আবার সেই কর্মজীবন। তারপরও বলবো, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে পরিবারকে প্রতিদিন কাছে পাচ্ছি আমরা প্রবাসীরা।
লেখক:
প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |