লন্ডনের চিঠি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঈদ

খুব অবাক হচ্ছেন শিরোনামটি দেখে তাই না? অবাক হওয়ার কিছুই নেই। প্রবাস জীবনে এবারের পুরো ঈদটাই পালন করেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

শাফিনেওয়াজ শিপু, যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2017, 06:04 AM
Updated : 28 June 2017, 06:14 AM

সবাই বলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশাল মিডিয়া নাকি এই প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কিন্তু আমি বলবো, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আমরা প্রবাসীরা পরিবারকে কাছে পাচ্ছি প্রতি মুহূর্তে, প্রতিক্ষণে। বলতে গেলে, পরিবারের সাথে এবারের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছি শুধুমাত্র এই সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে, মানে- স্কাইপি, ভাইবার ও ইমোর মাধ্যমে।

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝে এই আনন্দ ও খুশি চাপা পড়ে যায় পরিস্থিতির কারণে। প্রবাসের মাটিতে এই নিয়ে সাতটি ঈদ পালন করলাম এবং প্রত্যেকটি ঈদ কেটেছিলো চাকরি আর ক্লাসের মধ্য দিয়ে।

এই প্রথম কোনো ক্লাস বা কাজ ছাড়াই ঈদ পালন করলাম পরিপূর্ণভাবে। যার কারণে এবারের ঈদটি একটু ব্যতিক্রম মনে হয়েছিলো। চেষ্টা করেছি পুরো দিনটি ভালোভাবে কাটানোর জন্য কিন্তু তারপরও কেন জানি বার বার মনে পড়ছিলো পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কথা। আসলে কিছু করার নেই, পরিবেশের সাথে নিজেকে তো মানিয়ে চলতে হবে।

তবে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আমরা প্রবাসীরা কিছুটা হলেও ঈদ পালন করতে পারছি পরিবারের সাথে। স্কাইপি, ভাইবার, ম্যাসেঞ্জার ও ইমো- এই সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আজকে আমরা প্রবাসীরা দূর থেকে বসেও পরিবারের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারছি।

মাঝে মধ্যে ভেবে অবাক হই, আগের দিনে মানুষ কীভাবে থাকতো এই সমস্ত সোস্যাল মিডিয়া ছাড়া! শুধুমাত্র একটি চিঠির মাধ্যমে তাদের সুখ-দুঃখ শেয়ার করতো। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আজকে পৃথিবী আমাদের হাতের মুঠোয় এবং সারা বিশ্বে এখন সোশাল মিডিয়া শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। 

এখানেও এবার চাঁদ রাতের দিন বের হয়েছিলাম মেহেদি দেওয়ার জন্য। যেহেতু আমাদের দেশে এই মেহেদি দেওয়াটা খুবই প্রচলিত। মেহেদি ছাড়া তো ঈদ চিন্তাই করা যায় না। এরপর ভোর পাঁচটা পর্যন্ত রান্না করলাম বিভিন্ন ধরনের খাবার, যেমন- কালাভুনা, পোলাও এবং ঝাল মাংস ইত্যাদি। রান্না করেছি ঠিকই, কিন্তু তারপরও মিস করছি মায়ের হাতের সুস্বাদু ও লোভনীয় খাবার।

মা’কে ফোন কললাম স্কাইপিতে। বললাম, এই প্রথম প্রবাসের মাটিতে ঈদ মনে হচ্ছে। আমার মা তো অবাক হয়ে গেলো তার মেয়ে রান্না করছে শুনে। আসলে সব বাবা-মায়েরা মনে করে তাদের ছেলেমেয়েরা যতই বড় হোক না কেন, তাদের কাছে আমরা বরাবরই ছোট।

মাকে বললাম, এখন আমি মোটামুটি সব রান্না করতে পারি। প্রবাসের জীবনে বসে থাকলে হবে না, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এখানে সবকিছুই একা করতে হয়। কথার এক ফাঁকে মা’র কাছ থেকেও জেনে নিলাম, কীভাবে তেহারি রান্না করা যায়। যাই হোক সেই সাথে তেহারিও রান্না করে ফেললাম। স্কাইপির মাধ্যমে রান্নাও হয়ে গেলো।

সকাল হলো এবং ঠিক বাংলাদেশের মতো নতুন জামা-কাপড় পরে স্কাইপির মাধ্যমে বাসার সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালাম। এমনকি আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকেও ঈদের শুভেচ্ছা জানালাম। এইভাবে সকালটা পার করলাম বাংলাদেশে সবার সাথে কথা বলে।

আমরা যে বাসায় এখন থাকি, সেই বাসায় সকাল থেকেই মেহমান আসা শুরু হয়েছিলো। যার কারণে বেশ উৎসব উৎসব মনে হচ্ছিলো। সেই মেহমান আসা দেখে বাংলাদেশের কথাও মনে পড়ে গেলো। ঠিক এই রকমই আমাদের বাসায় সকাল থেকে মেহমান আসতো এবং পুরো বাড়ি জমজমাট হয়ে থাকতো। সেই মুহূর্তগুলো মিস করছি।

প্রবাসে এতোগুলো ঈদ পালন করলাম আর আগে কিন্তু কোনো ঈদে কোথাও বেড়াতে যেতে পারিনি। এই প্রথম বের হলাম বিকালে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বেড়াতে। কিন্তু তারপরও প্রচণ্ড রকমভাবে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে মিস করছিলাম। তারপর বাসায় এসে আবার সেই স্কাইপে বসে গেলাম।

এভাবেই কেটে গেলো আমার ঈদের দিনটি। এরপর শুরু হয়ে গেলো আবার সেই কর্মজীবন। তারপরও বলবো, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে পরিবারকে প্রতিদিন কাছে পাচ্ছি আমরা প্রবাসীরা।

লেখক:

 প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী     

ই-মেইল: topu1212@yahoo.com

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!