কথাগুলো শোনার পর খুব অবাক হয়েছিলাম! কারণ আমাদের দেশে তো এই ধরনের কোনো নিয়ম নেই। তাছাড়া এই ধরনের নিয়মের সাথে আমরা খুব একটা পরিচিতও নই। তবে এই দেশে আসার পর যখন আমার সামনে অনেকগুলো ঘটনা ঘটলো, তখন অবশেষে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম।
এক কথায় জরিমানা হচ্ছে নিয়ম-কানুন মেনে না চলার শাস্তি। যার কারণে প্রতিনিয়ত সবাইকে সর্তক থাকতে হয় এই জরিমানা বা শাস্তি থেকে দূরে থাকার জন্য। তবে এক দিক দিয়ে ভালো, হয়তো এই জরিমানার কারণেই মানুষ এখনো ঠিকমতো নিয়ম-কানুন মেনে চলছে।
এই দেশে আসার পর প্রথম দিকে আমার মাথায় সব সময় একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খেতো, সেটি হলো- এতো মানুষ বসবাস করে এইখানে কিন্তু তারপরও কীভাবে সবকিছু নিয়মানুযায়ী চলছে? তবে এই প্রশ্নের উত্তরটিও পেতে খুব বেশি দিন সময় লাগেনি।
এক কথায় আমি মুগ্ধ! এইদেশের প্রত্যেকটি নিয়মেই আমি মুগ্ধ। আসার পর থেকে কেন জানি সবকিছুই আমাকে আর্কষণ করছে এব্ং এখন বুঝতে পারছি এই আর্কষণ করার পেছনে শুধু একটিই কারণ- এই দেশের নিয়ম-কানুন। তবে এতোটুকু বলতে পারবো, আজকে এই ইংরেজ জাতি উন্নত হওয়ার পেছনে তাদের এই নিয়ম-কানুনগুলো।
কয়েকটি ঘটনার মাধ্যমে অবগত হলাম, কেন এই দেশে প্রত্যেকটি কাজ সঠিক নিয়মেই হচ্ছে। সম্প্রতি তিনটি ঘটনা আমাকে খুবই অবাক করেছে।
আমার বন্ধুটি ‘সরি’ বলার পরও তার জরিমানাটা কিন্তু মাফ হয়নি বরং সাথে সাথে তাকে ৮০ পাউন্ড জরিমানা দিতে হলো। তাকে সর্তক করে দিলো পরবর্তীতে যাতে এই কাজ না করে। আমি একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন, কারণ চোখের সামনে এতোগুলো টাকা তাকে জরিমানা দিতে হলো!
সেদিন পুলিশের একটি কথা আমার খুব ভালো লেগেছিলো। পুলিশ বললো, “আমি যদি তোমাকে এখন মাফ করে দেই, তাহলে তুমি আরও করবে। সেটা যাতে না করো, সেজন্য তোমাকে শাস্তি হিসেবে জরিমানা দিতে হবে।” একবার ভাবুন তো, এই রকম নিয়ম বা সার্ভিস যদি আমাদের দেশে থাকতো, তাহলে আজ দেশ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যেতো। তবে এক দিক দিয়ে ভালোই হলো, ওইদিন আমার বন্ধুর সাথে আমরা যারা ছিলাম, এক কথায় আমাদেরও শিক্ষা হয়ে গেলো।
তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছিলো একটি শপিং মলের সামনে। ভুল জায়গায় গাড়ি পার্ক করার কারণে জরিমানা দিতে হয়েছিলো আমার এক বান্ধবীকে। শুধু যে শপিং মল বা অফিস-আদালত বা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নয়, এমনকি এইখানে প্রত্যেকটি বাসার সামনেও গাড়ি পার্কিং-এর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। হয়তো এই নির্দিষ্ট জায়গার কারণেই রাস্তা বা অলি-গলিতে কোনো ধরনের জ্যাম সৃষ্টি হয় না। কিন্তু দেখুন এমনকি এই ক্ষেত্রেও আমাদের দেশে একেবারে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। আমরা কি পারি না, এই ধরনের নিয়মগুলো আমাদের দেশে শুরু করতে?
ও, আরেকটি কথা। এই দেশে কিন্তু প্রত্যেকটি বাসায় দুটো রঙ-এর ময়লা ফেলার বক্স বা বিন থাকে, একটি কালো এবং অন্যটি সবুজ রঙ। যেসব ময়লা বা আবর্জনা রি-সাইকেল করা যায় সেগুলো রাখা হয় সবুজ বক্সে এবং কালো বিন বক্স হচ্ছে তার বিপরীত। কিন্তু আর্বজনা বিন করতে যদি ভুল হয়, তাহলে জরিমানা দিতে হবে।
আজকে আমাদের দেশে যদি এই ধরনের নিয়ম-কানুনগুলো থাকতো তাহলে এতোদিনে দেশ অনেক উন্নতি করতে পারতো। কিছু নিয়ম তো আছে বটে, কিন্তু আমরা সেই নিয়মগুলো ঠিকমতো পালন করি না।
মনে রাখতে হবে একটি দেশের উন্নতির জন্য শুধু সরকারকেই সচেতন থাকলে হবে না, বরং সেই সাথে জনগণকেও সচেতন থাকতে হবে।
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |