প্রবাসের চিঠি: এইতো আমার জন্মভূমি

নান্নু ভাই আমার শ্রদ্ধাভাজন বড় ভাই, সিডনিতে থাকেন। তিনি গত মাসে একটি প্যাকেজ ট্যুরে স্ত্রীকে নিয়ে চীনে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

নাইম আবদুল্লাহ, সিডনি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2017, 10:51 AM
Updated : 2 June 2017, 10:51 AM

সেখান থেকে সিডনি ফেরার পথে মাটির টানে দেশে গিয়েছিলেন। গত শুক্রবার সিডনি ফিরে ফেইসবুকে তার বাগানে অনেক মিষ্টি কুমড়া হয়েছে জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিলেন। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, নান্নু ভাইয়ের গাছে অনেক মিষ্টি কুমড়া পেকেছে। আনবো নাকি? স্ত্রীর সম্মতিতে নান্নু ভাইকে ফোন করে মিষ্টি কুমড়ার কথা বললে তিনি হেসেই খুন।

অবশেষে হাসি থামিয়ে বললেন, বাসায় আসো। আমি ওনার বাসায় গিয়ে তার দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলাম। তিনি শুকনা মুখে লজ্জিত ভঙ্গিতে বললেন, গত সাত বছর পর দেশে গিয়ে ফেরার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে ঘটলো বিরাট বিপত্তি। এয়ারলাইন্স কাউন্টারে বোর্ডিং পাস দিয়ে লাগেজ জমা নিয়ে একজন সুদর্শন বাঙালি জানালো, প্যাসেঞ্জার লিস্টে আপনাদের নাম নেই।

নান্নু ভাই আকাশ থেকে পড়ে বিনীত ভঙ্গিতে ওই অফিসারকে বললেন, আমি অনলাইনে বুকিং এবং বোর্ডিং পাস কমপ্লিট করেছি। আপনারা বোর্ডিং পাস দিয়ে ল্যাগেজও নিয়ে নিয়েছেন। তারপর কিনা বলছেন, প্যাসেঞ্জার লিস্টে আমাদের নাম নেই? সুদর্শন অফিসারটি রাগত ভঙ্গিতে বললেন, আপনি আপনার টিকেট এজেন্টের কাছে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে তারপর আসেন।

এখন বাজে রাত বারোটা আর সিডনিতে ভোর চারটা। এখন কীভাবে আমি টিকেট এজেন্টের সাথে কথা বলবো? অফিসার কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিল। নান্নু ভাই ততক্ষণে ঘামতে শুরু করেছেন। চায়না থেকে তার সিডনিগামী কানেক্টিং ফ্লাইট। সিডনি সময়মত পৌঁছতে না পারলে চাকরি-বাকরি সব যাবে।

নান্নু ভাই দিশেহারা হয়ে তার এক আর্মি ক্লাসমেটকে ফোন করে বিষয়টা জানালো। তিনি ঢাকা এয়ারপোর্টের আর্মি ইন চার্জকে ফোন করে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করলেন। আর্মি অফিসার এয়ারলাইন্স কাউন্টারে আসার পর সিট নেই সংক্রান্ত নাটকের দৃশ্যপট আমূল বদলে গেল। নান্নু ভাই আর তার স্ত্রী ওই ফ্লাইটেই সিট পেল।

দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানাতে জানতে নান্নু ভাই ও আমি গাড়ির কাছে পৌঁছে গেলাম। আমি নান্নু ভাইয়ের চোখের কোণায় পানি দেখতে পেলাম। তিনি তাড়াতাড়ি আমাকে বিদায় জানিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলেন। গাড়িতে উঠতে উঠতে আমার মনে পড়লো ক্লাস টেনের পাঠ্য বইয়ে পড়া সৈয়দ মুজতবা আলীর গল্পের নায়ক পানশিরের (আফগানিস্তানের পানশির উপত্যকা) আবদুর রহমানের কথা ‘ইনহাস্ত ওয়াতা নাম’  অর্থ্যাৎ ‘এইতো আমার জন্মভূমি’।

লেখক: প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!