প্রবাসের চিঠি: ‘আমাদের কি দেখার কেউ নেই?’

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয় ২০১২ সালের অক্টোবরে। চার বছরের বেশি সময় পরও ভিসা জটিলতার এখনও অবসান হয়নি।

প্রবাস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2017, 12:27 PM
Updated : 18 April 2017, 12:27 PM

সেই সময় আমিরাতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এটিকে ‘সাময়িক’ সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়। কিন্তু একই সাথে রিলিজ বা ট্রান্সপারেবল ভিসাও বন্ধ হয়ে যায়। এতে একদিকে হাতছাড়া হচ্ছে বাংলাদেশি শ্রমবাজার, অন্যদিকে শ্রম বিক্রি করতে আগ্রহীরা প্রতীক্ষা করছেন মাসের পর মাস।

দুবাইয়ে প্রবাস জীবন যাপন করছেন এমন একজন বাংলাদেশি শ্রমিক এম. জাহাঙ্গীর আলম। শনিবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক বরাবর হাতে লেখা এক চিঠিতে তার অভিযোগগুলো জানিয়েছেন।

 ‘আমাদের কি দেখার কেউ নেই’ শিরোনামে চিঠিতে তিনি লিখেন, “আজ থেকে পাঁচ বছর আগে এখানে (আরব আমিরাত) ভিসা ইস্যু বন্ধ রয়েছে, শুধু তাই নয় যারা এখানে কর্মরত আছেন তাদের এসপন্সর (স্পন্সর) পরিবর্তন করারও সুযোগ নেই। যার ফলে কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা ভিসা কেনসেল (বাতিল) করলে সুজা (সোজা) দেশে চলে যেতে হচ্ছে।”

বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি লিখেন, “যারা বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকুরিরত আছেন তাদের উপর চলতেছে মানসিক নির্যাতন, না পারছে ভিসা কেনসেল করতে না পারছে দেশে চলে যেতে। এখানে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেট নামে দুটি অফিস রয়েছে কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোন তৎপরতা দেখা যায় না। তাদের কাজ শুধু পাসপোর্ট ইস্যু আর পাসপোর্ট নবায়ন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, মনে হবে একেকটা পাসপোর্ট অফিস।”

চিঠিতে আরব আমিরাতে ‘দক্ষ’ কূটনীতিক নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এম জাহাঙ্গীরের মতো কেউ কেউ সুযোগ পেলেই প্রশ্ন করছেন, ‘কবে খুলবে আমিরাতের ভিসা?’ প্রত্যাশিত জবাব না পেয়ে বড় হয় তাদের দীর্ঘশ্বাসের মাত্রা।

২০১৪ সালের অক্টোবরে আমিরাত সফর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ভিসা খোলার ইতিবাচক হিসেবে দেখছিলেন প্রবাসীরা। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আমিরাতে এক হাজার নারীকর্মী নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি সে সফরে।

এছাড়া আমিরাত সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা, বন্দিবিনিময় এবং ঢাকায় দেশটির দূতাবাস নির্মাণে জমি হস্তান্তর বিষয়ে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বন্ধ শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

আমিরাতের বর্তমানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা দশ লাখের কাছাকাছি বলে সরকার ও প্রবাসীরা মনে করেন। ভিসা বন্ধ ও কর্মস্থল পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় দেশিয় শ্রমিকের অভাবে বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।

ভালো বেতনের চাকরি থাকলেও ভিসা না থাকায় অনেকে চাকরি পরিবর্তন করতে পারছেন না। অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীরা ভিসার জন্য এইখানে পড়ালেখা শেষ করতে পারছেন না । যেসব ছাত্রের বয়স ১৮ হয়ে গেছে তাদের ভিসা লাগানোর আর সুযোগ নেই। যারা পড়ালেখা শেষ করেছেন তারাও চাকরির সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন না।

আমিরাতে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিসা খোলার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছিলেন। এতে প্রবাসীরা আনন্দিত হলেও সমস্যা এখনও মেটেনি।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, বর্তমানে ১২ থেকে ১৫ লাখ বাংলাদেশি এখানে রয়েছেন। এদের কেউ কেউ দীর্ঘদীন বেকার থেকে দারিদ্রে পড়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। নানা অপরাধে কয়েকজন বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ডের রায় ও কয়েকজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়েছে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!