মালয়েশিয়ার কাঁঠাল ও ডুরিয়ানের কথা

কাঁঠাল আমাদের জ্যৈষ্ঠ মাসের ফল,পাওয়া যায় বর্ষাকাল পর্যন্ত। মালয়েশিয়ায় কাঁঠাল পাওয়া যায় সারা বছরই। আমরা দেশে কাঁঠাল কিনি কমপক্ষে একটা। আর মালয়েশিয়ানরা কাঁঠাল কেনে কমপক্ষে চার খোসা!

রফিক আহমদ খান,মালয়েশিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2017, 09:30 AM
Updated : 17 March 2017, 12:24 PM

হ্যা, এখানে শপিংমলে বা রাস্তার পাশে কাঁঠাল বিক্রি হয় চার খোসা,পাঁচ খোসা বা ছয় খোসা প্যাকেট করে। আস্ত কাঁঠাল পাবেন না,তা নয়। আস্ত কাঁঠাল মিলবে বড় কোনো বাজারে গেলে। মালয়েশিয়ান খুচরা বিক্রেতা ছাড়া আস্ত কাঁঠালের প্রধান ক্রেতা হয়তো বাঙালিরা। খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে একটা মাঝারি সাইজের আস্ত কাঁঠাল কিনতে আপনার গুণতে হবে বাংলাদেশি পাঁচশ’ থেকে আটশ’ টাকা।

আমাদের দেশে কাঁঠালের খোসা কেউ একটু শক্ত পছন্দ করে,কেউ একটু নরম পছন্দ করে। এখানে খুচরা বিক্রেতারা খোসা একটু শক্ত থাকা অবস্থায় বিক্রি করে। কারণ বেচা শেষ না হলে আজকেরটা তো আগামীকালও বেচতে হবে। মালয়েশিয়ার কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী মালয়েশিয়ায় বার্ষিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। অধিকাংশ কাঁঠাল উৎপাদন হয় পাহাং ও জহুর প্রদেশে।

মালয়েশিয়ানরা কাঁঠাল খেলেও সে রকম ভক্ত নয়। কাঁঠালের জোরালো ভক্ত না হলেও এরা তুমুল পছন্দ করে কাঁঠালের মত দেখতে ‘ডুরিয়ান’ ফল। ‘ডুরিয়ান’ আস্ত বা খোসা- দুটোই দেখতে অনেকটা কাঁঠালের মত। আকারটা কাঁঠালের মত বড় নয়,কিছুটা ছোটখাটো কাঁঠালের মত। ডুরিয়ানের ওপরে কাঁটাগুলো কাঁঠালের কাঁটার চেয়ে একটু বড়।

বাংলাদেশিরা অনেকেই প্রথম প্রথম ডুরিয়ানের স্বাদ নিতে পারেন না। কারণ ডুরিয়ানের তীব্র গন্ধ! গন্ধটা কেমন? প্রথম প্রথম খেতে গেলে মনে হবে খুবই বিশ্রী গন্ধ! এই গন্ধকে আপনি হয়ত দুর্গন্ধই বলবেন, কিন্তু এই ফলটা মালয়েশিয়ানদের অনেক পছন্দের। বলা যায়,এটি এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল।

ডুরিয়ান মালয়েশিয়ার জাতীয় ফল। ডুরিয়ানকে মালয়েশিয়ায় ফলের রাজা হিসেবে অভিহিত করা হয়। ডুরিয়ান মালয়েশিয়ান আঞ্চলিক বা দেশিয় ফলের মধ্যে সবচেয়ে দামি ফলও বটে। মালয়েশিয়ায় ডুরিয়ানের কাছাকাছি দামে বা ডুরিয়ানের চেয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি হয় ইউরোপ থেকে আসা ‘চেরি’ ফল। চেরি মালয়েশিয়ায় ৫০ থেকে ৬০ রিঙ্গিত কেজি বিক্রি হয়।

ডুরিয়ান ফলটি বেশি পাওয়া যায় এই এশিয়ান অঞ্চলে। মানে মালয়েশিয়া,ইন্দোনেশিয়া,সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই,থাইল্যান্ডসহ আশপাশের আরও কয়েকটি দেশে। ডুরিয়ান ইন্দোনেশিয়ানদেরও ভীষণ প্রিয় ফল। ডুরিয়ান আস্ত এবং খোসা- দুইভাবেই বিক্রি হয়। দাম কেমন? কাঁঠালের দশ গুণ বেশি। ছয় খোসা কাঁঠাল যদি তিন রিঙ্গিত বিক্রি হয়,ছয় খোসা ডুরিয়ানের দাম পড়বে কমপক্ষে চল্লিশ রিঙ্গিত। অবশ্যই মৌসুমের সময় দাম কিছুটা কম থাকে। মৌসুমের সময় হাটে-বাজারে বা রাস্তার মোড়ে,পথের ধারে ডুরিয়ানের স্তুপ দেখা যায়। পথের ধারে বসেও আরামে ডুরিয়ান খায় মালয়েশিয়ানরা।

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের ডুরিয়ান বিভিন্ন দামের হয়। আস্ত ডুরিয়ানের সাইজ,স্বাদ,জাত ও উৎপাদনের অঞ্চল বিবেচনায় ডুরিয়ানের বিভিন্ন নামও দেন বিক্রেতারা, যেমন- মুচাংকিং,ডি টু, ডি টোয়েন্টিফোর,ডি সেভেন্টিএইট,ডিএইটিএইট ইত্যাদি। ‘মুচাংকিং’ ডুরিয়ানের অন্যতম দামি জাত। আস্ত ‘মুচাংকিং’ ডুরিয়ানের দাম পড়বে কেজি ৪০ থেকে ৬০ রিঙ্গিত।

মালয়েশিয়ায় ‘লামবুতান’ নামে লিচুর মতো দেখতে একটা মজাদার ফল আছে। অধিকাংশ বাংলাদেশিরা লামবুতান খেতে খুব পছন্দ করেন। অনেকে ছুটিতে দেশে যাওয়ার সময় পরিবারের জন্য নিয়েও যান। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় ঘুরতে এসে লামবুতান খেয়ে অনেক বাংলাদেশি পর্যটক দেশে লামবুতান নিয়ে যান বিমানে।

কিন্তু ডুরিয়ান খেয়ে ভালো লাগলেও দেশে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এর তীব্র গন্ধ। গন্ধের কারণে বিমানবন্দরে ডুরিয়ান বহন করা নিষিদ্ধ। শুধু বিমানবন্দরে নয়,অনেক হোটেল এবং ট্রেনেও ডুরিয়ান বহন করা নিষিদ্ধ। ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, বৃটেনের বিখ্যাত ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে ডুরিয়ানকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গন্ধযুক্ত ফল হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ডুরিয়ান মালয়েশিয়ায় সারা বছর পাওয়া গেলেও জুন-জুলাই মাসে বেশি পাওয়া যায়। এই সময়কে ডুরিয়ান মৌসুম বলা যায়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে,স্বাদের ফলটি মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেকেই খেতে পারেন না এর তীব্র গন্ধের কারণে। কেউ কেউ খেতে পারেন এবং খুব পছন্দও করেন। অনেক বাংলাদেশি আছেন, যারা ১২ বছর মালয়েশিয়ায় থেকেও হয়তো ১২ বার ডুরিয়ান খাননি! খাবে কীভাবে? আমাদের পছন্দের ফল তো ডুরিয়ান নয়,আমাদের প্রিয় কাঁঠাল। তাই তো মালয়েশিয়ায় আস্ত কাঁঠালের ক্রেতা বাঙালিরা। ডুরিয়ানের তীব্র গন্ধে মুখের রুচি ফিরে যায় জ্যৈষ্ঠের কাঁঠালে।

লেখক: মালয়েশিয়া প্রবাসী।

ইমেইল: rafiq.akhan80@gmail.com

এ লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!