এখন আনন্দ নিয়েই মরতে পারব: মুহিত

হতাশার কারণে একসময় রাজনীতি থেকে অবসরের কথা ভাবলেও এখন দেশ যেভাবে ‘এগিয়ে চলেছে’, তাতে মারা গেলেও ‘দুঃখ থাকবে না’ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2016, 07:00 AM
Updated : 28 Feb 2016, 07:00 AM

শনিবার নিউ ইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালির চেতনামঞ্চের আয়োজনে দুই দিনের একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অশীতিপর মুহিতের এই বক্তব্য আসে। 

“২০০০ সালেই রাজনীতি থেকে অবসরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম। বড় বেশি হতাশায় ছিলাম জীবনে কিছুই করতে পারিনি বলে। তো অবসরে যাইনি, আছি। এখন ৮৩ বছরে এসেছি।

“অত্যন্ত তৃপ্তির বিষয় এই যে, এখন যদি মারাও যাই তাহলে খুবই আনন্দে, মহানন্দে মারা যাব। কারণ আমি যেভাবে চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,” বলেন মুহিত।

বাংলাদেশ থেকে এখন সাম্প্রদায়িক শক্তি ও হরতাল ‘বিদায় নিয়েছে’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কৃতিত্ব দেন। 

একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে মুক্ত আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও অতিথিরা।

“দেশের উন্নতি ঘটছে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি ও মৌলবাদ- দেশ থেকে বিদায় হয়েছে। দেশ থেকে হরতাল বিদায় হয়ে গেছে, এখন কেউ আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে পারবে না। আমার মনে হয়, এটাই হচ্ছে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সাকসেস, সবচেয়ে কৃতিত্বপূর্ণ কাজ।”

তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধ ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতিকে বাংলাদেশের মানুষ বর্জন করেছে।

“আমরা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছি যে, বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হচ্ছে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি। ওইখানে কোনো রকম বাধা এলে তা তারা গ্রহণ করবে না।”

এ বিষয়ে বিরোধী দলগুলোরও ‘বোধোদয়’ হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতা মুহিতের বিশ্বাস।

“বেগম খালেদা জিয়ারও বোধোদয় ঘটেছে যে, জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। এটি সারা জাতির জন্যে বড় একটি অর্জন। বিধ্বংসী আচরণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা অর্জনের দিন শেষ।”

অবশ্য ‘অহিংস ও শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনের প্রতি নিজের সমর্থনের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। 

একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে মুক্ত আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও অতিথিরা।

“প্রতিবাদ করতে হবে, না করলে তো সরকার স্বেচ্ছাচারী হবে। তবে সে প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে অহিংস, শান্তিপূর্ণ। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের আপামর মানুষের এই মনোভাব ইতোমধ্যে আমরা সকলে বুঝতে সক্ষম হয়েছি।”

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের কথাও স্মরণ করেন।

“নানা দেশে ভাষার জন্যে আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু ভাষার অধিকার ছিনিয়ে নিতে রক্তদান, বিশ্বে আর কোনো দেশে হয়নি। বাঙালি সেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।”

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি বর্তমান সরকারের গুরুত্ব দেওয়ার কথাও অর্থমন্ত্রী কথা তুলে ধরেন।

“আগে এ মন্ত্রণালয়ের বাজেট ছিল ২০ কোটি টাকার মতো। এখন তা ১০ গুণ বেড়ে ২৫০ কোটি টাকা হয়েছে।”

আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার মতো হবে বলে জানান মুহিত।

নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস পাবলিক স্কুল-৬৯ মিলনায়তনে বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যজন জামালউদ্দিন হোসেন।

পরে ‘বহির্বিশ্বে একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী মুহিত, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন, ড. কালিপ্রদীপ চৌধুরী ও অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীর লেখা ‘সোনালী দিনগুলি’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করা হয়।