বাংলাদেশে সন্ত্রাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের উদ্বেগ

ব্লগার-লেখক-প্রকাশকসহ সাম্প্রতিক হত্যার ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীদের আয়োজনে এক সম্মেলনে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। 

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2015, 09:24 AM
Updated : 10 Nov 2015, 05:51 PM

একইসঙ্গে ধর্মীয় উগ্রপন্থা ঠেকাতে ‘শক্তিশালী সুশীল সমাজের’ সমর্থন নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে উদারপন্থি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার উপর জোর দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ক্যাম্পাসে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন শেষ হয় ৮ নভেম্বর।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (বিডিআই) আয়োজিত সম্মেলনে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইডেন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও নীতি-নির্ধারকসহ দেড় শতাধিক প্রবাসী ও শিক্ষার্থী অংশ নেন।

সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ কী মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হতে যাচ্ছে?’ শীর্ষ এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পিয়াই স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তাজ হাশমী ও আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের অধ্যাপক ইফতেখার আহমেদ।

বাংলাদেশে ব্লগার হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তাজ হাশমী বলেন, খুব শিগগিরই বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিরতামুক্ত হচ্ছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।

“মুক্তমনা লেখকদের টার্গেট করে হত্যার মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকার আলামতই পাওয়া যাচ্ছে।”

তবে হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের যোগসূত্র আছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক ইফতেখার বলেন, বাংলাদেশে যারা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, তাদের অপতৎপরতা কমাতে হলে শক্তিশালী সিভিল সোসাইটির সহায়তায় উদারপন্থি একটি সেক্যুলার রাজনৈতিক দলকে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে হবে।

সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনা দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা অ্যান ম্যাককনেল।

বার্নিকাট বলেন, “বাংলাদেশে ধর্মীয় চরমপন্থিদের অপতৎপরতায় আমরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। কয়েকজন বিদেশি নাগরিক হত্যা, ব্লগার হত্যা ও এসব ব্লগারের লেখা নিবন্ধ-প্রবন্ধ প্রকাশকারীদের হত্যার ঘটনায় সকলেই উদ্বিগ্ন। এর ফলে সব মতবাদের মানুষের বসবাসকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।” 

এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চলতে থাকলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়তে পারে সতর্ক করে দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (বিডিআই) সম্মেলনে জাতীয় অধ্যাপক ড. নূরল ইসলামের হাতে ‘আজীবন সম্মাননা’ তুলে দেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ড. মুনীর কুদ্দুস। ছবি-বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (বিডিআই) সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়ে বক্তব্য রাখেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ছবি-বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

সম্মেলনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ।

১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন সংস্থা পরিচালিত জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রতি সিংহভাগ মানুষের সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমর্থন রয়েছে কি না- এমন এক জরিপ পরিচালিত হয় ১৯৯৬ এবং ২০০২ সালে। ৯৮% মানুষই সমর্থন দিয়েছেন গণতন্ত্রের পক্ষে।

“বাংলাদেশের মানুষ যে গণতন্ত্রকে স্বাগত জানায় তার ৩টি প্রমাণও উপস্থাপন করা যায়। এগুলো হচ্ছে, ১. গণতন্ত্রের জন্যে বিভিন্ন সময়ে মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, ২. নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলে ব্যাপকসংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন এবং ৩. বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা গণতন্ত্রের চর্চা করে।”

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থির রাখার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির উদ্যোক্তারা বিশাল অবদান রেখে চলেছেন বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, “এখন আমাদের লক্ষ্য আরও সুদূরপ্রসারী ও পরিবেশ-উপযোগী টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি হতে নেওয়া।”

এই সম্মেলনের বক্তব্য সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে পৌঁছানো হবে বলে জানালেন বিডিআইয়ের প্রেসিডেন্ট টেক্সাসের প্রেইরি ভিউ এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির বিজনেস কলেজের ডিন মুনীর কুদ্দুস।

সংগঠনটির সদস্য ওয়াশিংটন ডিসির ‘সাউথ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ফাইজুল ইসলাম বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, প্রিয় মাতৃভূমির কল্যাণে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে। যা করলে দেশের মঙ্গল হবে, তিন দিনের এ কনফারেন্সে সে কথাই আমরা বললাম।”

১৯৯৫ সালে ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গে ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন’ শীর্ষক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের উদ্যোগে বিডিআই কনফারেন্সের যাত্রা শুরু হয়।

এবারের সম্মেলনে জাতীয় অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলামকে ‘বিডিআইয়ের আজীবন সম্মাননা’ দেওয়া হয়।

সম্মেলন আয়োজনে সহায়তা করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সুবীর চৌধুরী এবং মলিনী চৌধুরীর নামে ‘চৌধুরী স্টাডিজ সেন্টার’ এবং ‘ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’ নামের দুটি সংগঠন।

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা এখন থেকে সরাসরি আমাদেরকে জানাতে পারেন। পুরো নাম, ঠিকানা ও ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায় probash@bdnews24.com