নিউ ইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে অর্থনীতির এই শিক্ষকের বইটির প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয় জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সমকালীন নানা বিষয়ে কথা বলেন বারকাত।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিউ জার্সির প্লেইন্সবরো টাউনশিপের কাউন্সিলম্যান মুক্তিযোদ্ধা নূরন্নবী। বই নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস ও নিনি ওয়াহেদ এবং জাতিসংঘের সিনিয়র ইকনোমিস্ট নজরুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল মো. শামীম আহসান।
আবাসন ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় বারকাতকে। সাংস্কৃতিক সংগঠক রানু ফেরদৌস তার হাতে তুলে দেন একগুচ্ছ ফুল।
সেমন্তী ওয়াহেদের সঞ্চালনে ছিমছাম এ অনুষ্ঠানে নূরন্নবীকেও সম্মাননা জানানো হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চতুর্থবারের মতো কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হওয়ায়।
তামাক উৎপাদনে কৃষককে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি তামাকের প্রতি আসক্তি হ্রাসে বিশ্বব্যাপী কর্মরত নিউ ইয়র্কের ‘ব্লুমবার্গ ফিলনথ্রপি’র একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বারকাত।
যুক্তরাষ্ট্র ও আল কায়দা
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে সাম্প্রতিক ব্লগার হত্যাকাণ্ডসহ ঘটনাবলি তুলে ধরে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক হতে সবাইকে পরামর্শ দেন বারকাত।
“যুক্তরাষ্ট্র আল কায়দা আর আইসিসের পেছনে ধাওয়া করছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্র যেদিকে তাকাচ্ছে, আল কায়দাও সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশিদেরও সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।”
ব্লগার-লেখক-প্রকাশক হত্যার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, এখন সময় হচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর।
মাদ্রাসা শিক্ষা বিস্তারের প্রসঙ্গে বারকাত বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে যা নেই, তা রয়েছে বাংলাদেশে। স্কুলগামী প্রতি ৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর একজনই যাচ্ছে মাদ্রাসায়। একইভাবে প্রতি ৩ জন শিক্ষকের একজন যাচ্ছেন মাদ্রাসায়। এই পরিস্থিতি তৈরি হয় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের জন্যে গঠিত ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা দুটি থেকে একটিতে কমিয়েেআনার সমালোচনাও করেন তিনি।
“যতগুলো মামলা বিচারাধীন রয়েছে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করতে ৫০০ বছর সময় লাগবে। এজন্য আমি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি যে, কমপক্ষে ১০টি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়া জরুরি।”
মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের ভূমিকার মূল্যায়ন এখনও হয়নি বলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।
“৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়েছেন। এরমধ্যে ২৫ লাখই গ্রাম-বাংলার। কিন্তু সে চিত্র ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়নি। কারণ, যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি করেছেন বা করছেন, তারা সকলেই শহুরে।”
মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো নারীদের নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশংসাও করেন তিনি।
‘সম্পদ কেড়ে ধনী’
বাংলাদেশের ধনীরা অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করে সম্পদ বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বারকাত।
“জনা পঞ্চাশেক লোকের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিপুল অর্থ পড়ে আছে,” বলেন রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বারকাত।
বাংলাদেশে ‘সুশীল শ্রেণির ১৭ জনের’ অন্য দেশের পাসপোর্ট রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
“গুলশান-বনানীতে আলিশান বাড়িও আছে। প্রত্যেকের সন্তানেরাই বিদেশে লেখা-পড়া করছে।”
বারকাত বলেন, “এই ১৭জনকেই দেখা যায় বাংলাদেশের প্রধান দুই নেত্রীকে পরামর্শ প্রদান করতে, উপদেশ দিতে।
“এদের মধ্যে যাকে সবচেয়ে বড় মাপের সুশীল বলে বিবেচনা করা হয়, সেই ভদ্রলোকটি ১৯৭৮ সালে গুলশানে ১০ কাঠার একটি প্লট পান। ১৯৮২ সালে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই ভবনের ট্যাক্স প্রদান করেননি। যদিও হর-হামেশা তার মুখে বিভিন্ন সেক্টরের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হয়। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার কথা উচ্চারিত হচ্ছে তার মুখে।”
প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা এখন থেকে সরাসরি আমাদেরকে জানাতে পারেন। পুরো নাম, ঠিকানা ও ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায় probash@bdnews24.com