‘কানাডা প্রবাসীদের স্থানীয় রাজনীতিতে আগ্রহ নেই’

‘কানাডার রাজনীতি ও বাংলাদেশি কমিউনিটির ভূমিকা’ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা  কানাডায় আওয়ামী লীগ- বিএনপি হিসাবে না বরং কানাডার মূলধারার রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদের পরিচিত করতে প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়েছেন।

কানাডা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2015, 12:22 PM
Updated : 28 Sept 2015, 01:24 PM

শনিবার টরন্টোর ‘অ্যাক্সেস পয়েন্ট অন ড্যানফোর্থ’ মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডার আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এই আহ্বান জানান। মূলধারার রাজনীতি নিয়ে টরন্টোর বাঙালি প্রবাসীদের এই ধরনের আয়োজন এই প্রথম।

প্রবাসে বাঙালি প্রবাসীদের সহজাত প্রবণতার চিত্র তুলে ধরে প্যানেল আলোচক প্যানেল আলোচক  জর্জ ব্রাউন কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক ড. সুজিত দত্ত বলেন,  “বিদেশে এসেও বাঙালিরা ঘরে বাইরে সর্বত্রই দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন। তারা নিজেদের আওয়ামী লীগ- বিএনপি হিসেবে পরিচিত করতে ভালোবাসেন,  কিন্তু তারা কানাডার রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন না, কানাডার রাজনেতিক দলের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করেন না। এটি অত্যন্ত দু:খজনক।

“বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসন নিয়ে কানাডার নাগরিক হওয়া প্রত্যেকের জন্যই ভোট একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট একদিকে যেমন অধিকার, অন্যদিকে এটি দায়িত্ব এবং সুযোগও বটে। ভোট দিতে না গেলে নাগরিক দায়িত্বের প্রতিই অবহেলা করা হয়।”

তিনি আরও বলেন,  “আমাদের প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান এমনকি শ্রীলংকার কমিউনিটি থেকেও হাউজ অব কমন্সে, সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে। কিন্তু বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে কোনও পর্যায়েই  প্রতিনিধি নেই। গত সিটি নির্বাচনে বাঙালি কমিউনিটি থেকে অনেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন, ফেডারেল নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। যারা প্রার্থী হয়েছিলেন বা হতে চেয়েছেন- তাদের যোগ্যতা বিচার বিশ্লেষণের দাবি রাখে।‘আমি বাঙালি’ কেবল এই যোগ্যতা নিয়ে কেউ প্রার্থী হলেই কি কমিউনিটি তাকে সমর্থন দেবে? নাকি তার যোগ্যতাও যাচাই বাছাই করবে।”

নতুন প্রজন্মের অদিতি জহিরের সঞ্চালনায় সূচনা বক্তব্য রাখেন অ্যালামনাইর সহ-সভাপতি সুধান রয় এবং ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন সাধারন সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাহার। প্যানেল আলোচকরা উপস্থিত শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

প্রধান অতিথি ইলেকশন কানাডার ইষ্ট ইয়র্ক ইলেক্টোরাল ডিস্ট্রিক্ট এর রিটার্নিং অফিসার জেফ পলিন বাঙালি কমিউনিটিকে কানাডার সকল পর্যায়ের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কানাডার  নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া তেমন কঠিন  বিষয় নয়। রাজনৈতিক দলের হয়ে কিংবা ব্যক্তিগতভাবেও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ আছে।”

তিনি জানান,  তার ইলেক্টোরাল ডিস্ট্রিক্টে বাঙালি ভোটারের সংখ্যা বেশি তাই তারাও এই কমিউনিটির প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছে। বাঙালি কমিউনিটির সঙ্গে ইলেকশন কানাডার সম্পর্ক আরও নিবিড় করার জন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজনকে কমিউনিটি রিলেশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জেফ পলিন আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য বাঙালি কমিউনিটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এটি আপনাদের অধিকার,  এই অধিকার প্রয়োগে এগিয়ে আসুন। কোনও ধরনের সমস্যা থাকলে তা আমাদের জানালে ইলেকশন কানাডা সেই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।”

প্যানেল আলোচক বেসরকারি সংস্থা সেটেলমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড ফ্যামিলি সাপোর্ট সার্ভিসেসের  সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. কাজী হক বলেন, “নতুন আসা অভিবাসীরা সম্পূর্ণ অচেনা একটি পরিবেশে এসে নিজেদের টিকিয়ে রাখার লড়াইয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। জীবনের সংগ্রামের তীব্রতার কারণেই তাদের পক্ষে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠে না। 

“ কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হলেও তারা কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়েই মেতে থাকেন।” তিনি এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে কানাডার রাজনীতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার তাগিদ দেন।

ড. কাজী হক আরও বলেন, “কানাডার আইনে কেবলমাত্র নাগরিকরাই জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, স্থায়ী বাসিন্দাদের ভোটাধিকার নাই। নাগরিকত্ব পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, এই বিধানও অভিবাসীদের রাজনীতির ব্যাপারে অনাগ্রহী করে তুলে।” তিনি স্থায়ী বাসিন্দাদের জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব তুলেন।

আরেক আলোচক বেসরকারি সংস্থা অ্যাক্সেস অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপক ড. একেএম আলমগীর বলেন, “বাঙালি সবচেয়ে রাজনীতিপ্রবণ জাতি। তারা সবসময়ই রাজনীতি চর্চা করতে পছন্দ করেন। কিন্তু প্রবাসে তারা কানাডার রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ না দেখিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।”

বাঙালি কমিউনিটির প্রতিটি সদস্যকে আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “নিজে ভোট দিয়ে, অন্যকে ভোট দিতে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমরা মূলধারার রাজনীতি চর্চা শুরু করতে পারি।”  

টরন্টো স্টার এর সাংবাদিক তামারা খন্দকার বলেন, “প্রবাসে বাঙালি কমিউনিটি থেকে যারাই নির্বাচনে প্রার্থী হন- তাদের প্রায় সবাই নির্বাচনের মৌসুমে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। অথচ প্রার্থী হওয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার, প্রস্তুতির ব্যাপার এবং অবশ্যই যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপার।” তিনি বাঙালি পরিবারের সন্তানদের স্কুল, কলেজ পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন,  “রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বাঙালিদের বক্তব্যকে পৌঁছে দিতে হলে এর কোনও বিকল্প নেই।

তামারা খন্দকার আরও বলেন, “কানাডায় যারাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বা প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।বাঙালি কমিউনিটিকেও সেই পথেই এগুতে হবে। আর তার জন্য ব্যক্তিগত পরিমণ্ডলেও মূলধারার রাজনীতি, বিভিন্ন ইস্যূ, নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে।”  

সভাপতির ভাষণে সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলেন, “কানাডার সকল পর্যায়ে বাঙালি প্রতিনিধি চাই, নির্বাচনে বাঙালি প্রার্থী চাই- তবে যোগ্য প্রার্থী চাই’- এই শ্লোগান নিয়ে কমিউনিটিতে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। প্রার্থী হবার আগে প্রার্থী হবার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।”

তিনি বলেন,  “প্রবাসে বাঙালি কমিউনিটিকে বাংলাদেশীয় দলীয় রাজনীতির চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”

প্রবাস জীবনের গল্প ও অভিজ্ঞতা এখন থেকে আমাদের সরাসরি জানাতে পারেন। পুরো নাম ও সংশ্লিষ্ট ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়  probash@bdnews24.com