‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রচারণার লড়াইয়ে আমরা পিছিয়ে’

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি এবং লেখক মফিদুল হক বলেছেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে জামায়াত সুপরিকল্পিতভাবে জোরালো অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার বিপরীতে বহির্বিশ্বে প্রচার-প্রোপাগান্ডার লড়াইয়ে আমরা পিছিয়ে আছি।

কানাডা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2015, 02:27 PM
Updated : 14 Oct 2015, 12:42 PM

বুধবার টরন্টোর ডেনফোর্থের রেডহট তন্দুরিতে একদল প্রবাসীর সঙ্গে আলোচনাকালে এই মত প্রকাশ করেন তিনি। শহরের লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্যোগের নেতৃস্থানীয়রা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

তিনি ৭১ এর গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে জোরালোভাবে আন্তর্জাতিক মহলে নিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটি বাংলাদেশের জনগণের ন্যায় বিচারের অধিকার- রাইট টু জাস্টিস। এই জনঅধিকারের পক্ষে বহির্বিশ্বে আরও বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্যোগ প্রয়োজন।”

নতুনদেশ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আরী সাগর এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাকসুর সাবেক এজিএস নাসির উদ দোজা। সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রবীন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজিজুল মালিক।

বাংলাদেশে চলমান মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের পণ্ডিতরা এই বিচার প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং ৭১ এ সংঘটিত গণহত্যা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপাত্তের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিভিন্ন দিক নিয়ে উপস্থিতরা প্রশ্ন ও মতামত তুলে ধরেন। এতে অংশ নেন প্রবীন সংগঠন বিদ্যুৎ দে, বাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সাজ্জাদ আলী, বিজ্ঞান লেখক স্বপন বসু, প্রজন্ম কানাডার ফারহানা আজিম শিউলী, সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সহসভাপতি সুধান রয় প্রমুখ।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মানবতার বিরুদ্ধে বিচার হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আইনের আওতায় যেটি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে প্রণীত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিকভাবে যে ন্যূরেমবার্গ ট্রায়ালের কথা বলা হয়, সেটিও অস্থায়ী আইনে সামরিক বিচার ছিল। সংসদ কর্তৃক পাশ করা কোন আইন দিয়ে সেই বিচার হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদ কর্তৃক পাশ করা আইনের আওতায় বিচার পরিচালিত হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে যে আইনটি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা সম্পৃক্ত ছিলেন।”

দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নিয়ে জাতিসংঘ বা পশ্চিমা প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে মফিদুল হক বলেন, মৃত্যুদণ্ড জাতিসংঘ অনুমোদন করে না, কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ আইন অনুমোদন করে। ফলে বাইরের শক্তির বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বরং বাংলাদেশে ৭১ এর গণহত্যার বিভিষীকাময় চিত্র তুলে ধরে তাদের সঙ্গে দেনদরবার করতে হবে।

তিনি  আরও বলেন, ৭১ এ সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের প্রশ্নে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়ই আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছিলো। জাতিসংঘ সচিবালয়ের কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু এবং ভুট্টোর সঙ্গে দফায় দফায় এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিচারের কাঠামো এমনকি বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও আলাপ আলোচনা অনেকটা এগিয়েছিলো। এসবই হয়েছিলো জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় জাতিসংঘের একধরনের স্বীকৃতি পেয়েছিলো।

মফিদুল হক বলেন, “জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো এখন হেইট স্পিচ বা ঘৃণা উদ্রেককারী বক্তব্য কিভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। কেননা তারা মনে করছে হেইট স্পিচ হচ্ছে গনহত্যার জন্য উসকানিমূলক তৎপরতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রচার প্রোপাগান্ডার পুরোটাই হেইট স্পিচ। তারা বিশেষ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা উদ্রেককারী বক্তব্য প্রচার করছে। তিনি হেইট স্পিচ এর দায়ে জামাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।”

প্রবাস জীবনের গল্প ও অভিজ্ঞতা এখন থেকে আমাদের সরাসরি জানাতে পারেন। পুরো নাম ও সংশ্লিষ্ট ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়  probash@bdnews24.com