এবার মেয়র হলেন আনিসুল হক

বিজিএমইএর সভাপতি ছিলেন, পরে হন এফবিসিসিআইর সভাপতি, এরপর সার্ক চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন আনিসুল হক, এখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র হতে যাচ্ছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2015, 00:37 AM
Updated : 29 April 2015, 02:50 AM

টিভি উপস্থাপক থেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা আনিসুল হককে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থনে চমক ছিল, কিন্তু ভোটে তা জয়ে কোনো চমক ছিল না।

ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সঙ্গে মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণের মাঝ পর্যায়েই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

বর্জনের পর পুনঃভোটের জন্য ইসিতে তাবিথের চিঠি পাঠানোর মধ্যেই গণনা শেষে বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বসে ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম।

এতে দেখা যায়, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে আনিসুল হক পেয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট। তার চেয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭ ভোট কম পেয়েছেন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের প্রার্থী তাবিথ।

প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ ভোটারের ঢাকা উত্তরে মোট ১০৯৩টি কেন্দ্রে তাবিথের বাস প্রতীকে সিল পড়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০টি।    

এই নির্বাচনে আনিসুলের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চেয়েছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক আরেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় দলটি বেছে নেয় তারই ছেলে তাবিথকে।

৬৩ বছর বয়সী ব্যবসায়ী আনিসুল হককে আওয়ামী লীগের সমর্থনে যেমন চমক ছিল, তেমনি ভোটের রাজনীতিতে নবিশ ৩৬ বছর বয়সী তাবিথকে বিএনপির সমর্থন দেওয়াটাও ছিল অপ্রত্যাশিত।

ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া তাবিথ বলেছেন, নির্বাচনের নামে তামাশা করাই ছিল সরকারের উদ্দেশ্য।

বিএনপির অভিযোগ খণ্ডন করে আওয়ামী লীগ বলে যে ভোট বর্জন করে এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পরিকল্পনা আগেই করে রাখা হয়েছিল।   

আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যুক্ত না থাকা আনিসুল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিযোগের জবাবে ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন এভাবে- “কে উঠে যাবেন, কে বয়কট করবেন, তার দায়িত্ব তো আমি নিতে পারব না।”

ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম থেকে তুলনামূলক কম গোলযোগপূর্ণ ঢাকা উত্তরে সকালে ভোট দেওয়ার পর তাবিথের কোনো ধরনের অভিযোগ না থাকার কথাও তুলে ধরেন সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক।

“খেলার মধ্যে তো ফাউল হয়ই। দেখতে হবে সেটা মাইনর না মেজর,” এই মন্তব্য করে তার বক্তব্য- যেটুকু ত্রুটি ছিল তা কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মেয়র পদে সমর্থন নিলেও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সেভাবে দেখা যায়নি আনিসুল হকের প্রচারে।

এই ব্যবসায়ী নিজেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পরিবর্তে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন।

“আমি সরকারি দলের প্রার্থী নই, দলীয় প্রার্থী নই। কিন্তু তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন রয়েছে-এটাই আমার শক্তি,” মনোনয়নপত্র জমা দিয়েই বলেছিলেন তিনি।

পরে আনিসুল হকের মুখে আবার উঠে আসে- তাকে মেয়র পদে দেখার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখেছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের।  

“শেখ হাসিনার এক ফু-তে আমি আনিসুল হক নেতা হয়ে গেলাম,” এই মন্তব্যও আসে তার কাছ থেকে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এই দলটি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হলে কাজ করতে সুবিধা হবে বলেও ভোটের প্রচারে বলেছিলেন তিনি।

তবে আবার নগরবাসীকে এই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন, মেয়র হলে নগরভবনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখবেন।

মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুল হক নিজের হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তার নিজের কোনো গাড়ি কিংবা বাড়ি নেই; যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার খোরাক ‍যুগিয়েছিল।   

অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আনিসুল হক গত শতকের ’৮০ ও ’৯০ এর দশকে টিভি উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি।

তবে পরে টেলিভিশনের পর্দায় মানুষ তাকে বেশি দেখেছিল ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই। ২০০৫-০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে তিনি হন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি।

টিভি উপস্থাপনা থেকে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে এখন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নগরকর্তার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন আনিসুল হক।

তার ভাষায়, “এর মধ্য দিয়ে (তাকে মেয়র পদে সমর্থন) রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের এক সম্মিলন হল।”

নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে আনিসুল রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রচারের শুরু থেকেই তিনি বলছেন, ঢাকার সমস্যা চিহ্নিত, এখন সমাধান করতে হবে। সেই অনুসারে নির্বাচিত হওয়ার পর এখন শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে আনিসুল হকের ‘সমাধান যাত্রা’।