তামাশাই ছিল উদ্দেশ্য: বিএনপি

ভোট বর্জন করে সিটি নির্বাচনকে ‘তামাশা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2015, 11:26 AM
Updated : 28 April 2015, 11:26 AM

ভোট ডাকাতির অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও। একই অভিযোগ চট্টগ্রামে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমেরও।

আর বিএনপি সমর্থিত আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের চোখে, মঙ্গলবার ভোট হয়নি, গায়ের জোরে ব্যালট বাক্স ভরার মহড়া হয়েছে।

সরকারবিরোধী আন্দোলন শিথিল করে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি মঙ্গলবার ভোটগ্রহণের মাঝ পর্যায়েই কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বয়কট করে।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। পরাজয় আঁচ করে বিএনপি এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে।

দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভোট বয়কটের ঘোষণা দিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তাবিথ বলেন, “সরকারের কি উদ্দেশ্য ছিল এরকম তামাশা করার।

“আমি যেসব কেন্দ্রে ঘুরেছি, কোথাও ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থী ও তাদের কাউন্সিলরদের এজেন্ট ছাড়া অন্যদের দেখতে পাইনি। আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।”

তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রের সামনে নিজের পোলিং এজেন্টের ছেঁড়া ব্যাচ দেখতে পাওয়ার দাবি করে তাবিথ বলেন, ভেতরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেও কোনো জবাব পাইনি।

তিনি অভিযোগ করেন,  মিরপুরের বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতন কেন্দ্রে বুকে নামফলকবিহীন পুলিশ সদস্যদের দেখেছেন তিনি।

“কেন্দ্রগুলোতে প্রধান ফটকে কোনো পুলিশ ছিল না। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করছিল ঢাকা এবং বাইরে থেকে আনা সরকারদলীয় নেতা-কর্মী। তারাই নির্ধারণ করছিল, কে কেন্দ্রে ঢুকবে। নির্বাচনের কোনো পরিবেশ আমি কোথাও লক্ষ্য করিনি।”

কয়েকটি কেন্দ্রে নিজেও বাধার মুখে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ বিএনপি সমর্থিত এই মেয়র প্রার্থীর।

“আমি গুলশানে মানারাত স্কুলে ভোট দিতে গেলে প্রথমে আমাকে যে ব্যালট পেপার দেওয়া হয়, তাতে পেছনে প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর ছিল না।”

সংবাদ সম্মেলনে আফরোজা আব্বাস বলেন, “ঢাকা দক্ষিণে আমার কোনো এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফকিরাপুলে একটি কেন্দ্রে আমি গেলে সেখানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাকেসহ গণমাধ্যমকর্মীদের লাঞ্ছিত করেছে।

“প্রতিটি গলি তারা দখল করে রেখেছিল। বিভিন্ন কেন্দ্রে আমাদের নারী ভোটারদের অপমানিত করা হয়েছে।”

ব্যালট পেপার ছিনতাই হতে দেখেছেন দাবি করে মেয়র প্রার্থীর স্ত্রী বলেন, “এটা ভোট ডাকাতি হয়েছে। মানুষের ভোটকে তারা (ক্ষমতাসীন) ছিনতাই করেছে।”

মামলা মাথায় নিয়ে অপ্রকাশ্যে থেকে প্রার্থী হলেও প্রচারে নামেননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তার পক্ষে প্রচার চালিয়ে আসা স্ত্রী আফরোজাও ভোট দেননি। তিনি বলেছেন, সমর্থকরা ভোট দেওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় তিনি ভোট দেননি।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপি নেতারা আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চট্টগ্রামে মনজুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে।

মনজুরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “৮০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র দখল হয়ে গেছে। আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চুপ রয়েছে।”

আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন নয়া পল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জীবনে অনেক নির্বাচন দেখেছি, কিন্তু এত নিকৃষ্ট, ঘৃণ্য ও জঘন্য নির্বাচন দেখিনি। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না। গায়ের জোরে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ঢোকানোর মহড়া হয়েছে।”

সকাল ছেলে ও নাতনিকে নিয়ে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য। ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসার পর সেখানে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় তাকে।  

“ঢাকা কলেজের একজন ছাত্র এসে আমাকে বলল- ‘মানুষ পুড়িয়ে মারেন, লজ্জা করে না। এখন ভোট দিতে এসেছেন’। কেবল তাই নয়, ওই ছাত্রটি আমার গাড়িতে ঢিল মেরে গ্লাস ভেঙে দিয়েছে।”

সিটি ভোটে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই পরামর্শক। 

“গত ৩/৪ বছর দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতেই আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। বেগম জিয়াও আমাদের সমর্থন জানিয়েছিলেন। আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নেওয়া। কিন্তু ভোট কারচুপির চিত্র দেখে মনে হল, আমাদের লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে।”

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন এই অধ্যাপক।

</div>  </p>