সম্পদ বেশি মনজুরের, আয়ে এগিয়ে নাছির

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন ছয় ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলম ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে আছেন।

মিন্টু চৌধুরীও মিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2015, 06:48 AM
Updated : 30 March 2015, 11:05 AM

নির্বাচনে প্রার্থী হতে রোববার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া  হলফনামায় এই তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রামের প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী।

এতে দেখা যাচ্ছে, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিরের ব্যবসার পরিমাণ এবং দায়দেনা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর আলমের চেয়ে কম। তবে নাছিরের বার্ষিক আয় মনজুরের চেয়ে বেশি। 

বার্থ অপারেটর, স্যুয়েটার কারখানা, আবাসন শিল্প, ফিশিং, ঘাট ইজারা এবং তেল পরিবহনের ব্যবসা রয়েছে আশির দশকের ছাত্রলীগ নেতা আ জ ম নাছিরের নামে।

৫৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ তার মোট বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন তিন কোটি ৬২ লাখ ৩২ হাজার ৭৪৪ টাকা।

এর মধ্যে ব্যবসা বাবদে বছরে তার আয় তিন কোটি ২০ লাখ টাকা। আর কোম্পানি পরিচালক হিসাবে ভাতা বাবদে তিনি বছরে পান ‍আরও ৪২ লাখ টাকা।

এছাড়া সম্মানী ও ব্যাংক সুদ মিলিয়ে বছরে আরও ৩২ হাজার ৭৪৪ টাকা আয় রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন নাছির। ঢাকায় একটি প্লট এবং চট্টগ্রাম শহরে পৈত্রিক বাড়ির ছয় ভাগের এক অংশের মালিক তিনি।

অন্যদিকে গত পাঁচ বছর চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পালন করা মনজুর আলমের হলফনামায় মোট বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে এক কোটি ৯২ লাখ ৭৫ হাজার ৯১৬ টাকা।

২০১০ সালের সিটি নির্বাচনে দলের সমর্থন বদলে মেয়র নির্বাচিত হওয়া ৬২ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ মোস্তফা হাকিম গ্রুপ অব কোম্পানির অন্যতম কর্ণধার। এ গ্রুপের ১২টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে আছেন তিনি।

হলফনামায় বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানার লভ্যাংশ হিসাবে তিনি বছরে পান এক কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৫ টাকা। আর মেয়র পদের সম্মানী হিসাবে গত এক বছরে পেয়েছেন আট লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

বাড়ি, দোকান ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ বছরে আরও ৩৫ লাখ সাত হাজার টাকা আয় রয়েছে মনজুরের।

দুটি ব্যাংক হিসাব ও একটি জীবন বীমার বিপরীতে চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের মোট দায়দেনার পরিমাণ আট কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৪ টাকা।

এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক লালদীঘি শাখায় সর্বোচ্চ আট কোটি ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯৮ টাকার দায় আছে। এক্সিম ব্যাংক বহদ্দারহাট শাখার ডিপিএসের বিপরীতে দেনার পরিমাণ ১২ লাখ ৯১ হাজার ১৪৩ টাকা। মেট লাইফ অ্যালিকো ইন্সুরেন্সের কাছে তার দেনা সাত লাখ ৪৪ হাজার ৮৩ টাকা।

অন্যদিকে ব্যাংকে মনজুর আলমের দায়-দেনার পরিমাণ চার কোটি ৭০ লাখ ছয় হাজার ১৯৮ টাকা।কোম্পানির বিভিন্ন পদে থাকা মনজুরের ঋণের পরিমাণও বিশাল। বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ ৩৬০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তবে ‍মনজুরের কোনো খেলাপি ঋণ নেই।

খেলাপি ঋণ নেই আ জ ম নাছিরেরও। হলফনামা অনুযায়ী, তার কাছে নগদ টাকা আছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৯০। ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ ৯১ হাজার ৩৬ টাকা। শেয়ার মার্কেট, কোম্পানি শেয়ার ও জীবন বীমা মিলিয়ে তার আরও ৪১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৮ টাকা আছে।

একটি পুরনো জিপ ছাড়া তার কোনো গাড়ি নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন নাছির।

আর স্ত্রীর নামে নগদ ৪৫ হাজার ৫৭৯ টাকা, ব্যাংকে এক লাখ ৩১ হাজার ৯৯৩ টাকা, ৩৪ লাখ ‍টাকার কোম্পানি শেয়ার, ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৩২০ টাকার এফডিআর এবং বিয়ের সময় পাওয়া ২০ ভরি সোনার গয়না থাকার তথ্য তিনি নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছেন।

মনজুর বলেছেন, তার কাছে নগদ এক কোটি ৬৯ লাখ তিন হাজার টাকা আছে। তার স্ত্রীর কাছে আছে ১৯ লাখ ৮০ হাজার নগদ টাকা।

বন্ড, শেয়ার ও কোম্পানি শেয়ার বাবদ মনজুরের কাছে আছে ২৮ কোটি ৩৯ লাখ সাত হাজার টাকা। তার স্ত্রীর হাতে আছে এক কোটি ৭১ লাখ ২৫ হাজার ‍টাকার বন্ড ও শেয়ার।

এছাড়া মনজুরের চার লাখ ৩০ হাজার টাকা দামের ‘বিভিন্ন’ যানবাহন আছে। স্বর্ণ আছে দুই লাখ ৩৩ হাজার টাকার। তার স্ত্রীর কাছে স্বর্ণ আছে ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকার।

সম্পত্তির যে হিসাব মনজুর দিয়েছেন, তাতে ছয় কোটি ৫৮ ‍লাখ ১৬ হাজার ৫৪৩ টাকার অকৃষি জমির তথ্য রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে আছে এক কোটি ৭৯ লাখ ২৮ হাজার টাকার অকৃষি জমি।

এছাড়া ১৮ লাখ ১৮ হাজার টাকার অন্যান্য ব্যবসায়ী মূলধন থাকার কথা হলফনামায় জানিয়েছেন মনজুর।