শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ‘পায়ে ধরতেও রাজি’ নাহিদ

শত অনুনয়-বিনয়ে কাজ না হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবার বললেন, এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল বন্ধে প্রয়োজনে তিনি ‘পায়ে ধরতেও’ রাজি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2015, 01:03 PM
Updated : 14 Feb 2015, 01:27 PM

হরতালের কারণে রোববারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “তাদের মনে দয়া-মায়া, মানবতার উদ্ভব হয়নি। আমি আশা করব তারা ন্যূনতম মানবিক বোধ মনে আনবেন।

“শিক্ষার্থীদের জন্য আমি পায়ে ধরতেও রাজি আছি। শিক্ষার্থীদের জন্য আমি সব কিছুই করতে পারি।”

পরীক্ষার মধ্যে হরতাল না দেওয়ার অনুরোধে কোন কাজ না হলেও আবারো বিএনপি নেতাদের প্রতি একই আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা বলতে পারেন, তুমি এতো বেহায়া কেন?”

নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দেন এক সময়ের বাম নেতা নাহিদ।

“আমি বেহায়া এজন্য যে, ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। অবরোধের মাঝে ফাঁকে ফাঁকে দেশব্যাপী হরতালের ডাকও আসছে তাদের পক্ষ থেকে। হরতালের কারণে এসএসসির ছয় দিনের ৪৪টি বিষয়ের পরীক্ষা এরইমধ্যে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আগামী রোববার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে আবারো হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি জোট। গত দুই সপ্তাহেও প্রথমে রবি থেকে বুধবার ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকে ২০ দল, যা পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “অনুরোধ সত্ত্বেও হরতালের কর্মসূচি ঘোষণায় আমি খুবই উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। সমগ্র জাতিও আতঙ্কিত। বিএনপি নেতারা দেশবাসীকে এ রকম পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ করছে।”

পরীক্ষার মধ্যে হরতাল শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত করে তোলে মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। আগামী ৪০ বছর এর খেসারত দিতে হবে, তাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি হবে।

কর্মসূচি দিলেও হরতাল-অবরোধ হচ্ছে না দাবি করে নাহিদ বলেন, আগামী প্রজন্মকে সর্বনাশের দিকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। শুধু বোমা মেরে মানুষ মারা হচ্ছে।

“ভবিষ্যতে আর কী সর্বনাশ অপেক্ষা করছে তা আমরা জানি না।”

হরতাল-অবরোধে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করতে হবে। ঠিক সময়ে এসএসসির ফল ঘোষণা করা যাবে কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে।

“পরিস্থিতি কী দাঁড়াচ্ছে আমরা তা অনুমান করতে পারছি না। আমরা তো আবেদন-নিবেদন করেও কোনো রেসপন্স পাচ্ছি না।”

হরতাল-অবরোধে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হেচ্ছে তা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কোনোভাবেই এই ক্ষতি পোষানো যাবে না।

“বিএনপি জোট স্নেহ, মায়া-মমতা কোনো কিছুর মূল্য না দিয়ে মানুষ মারার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করুন। জাতিকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেবেন না। আর হরতাল দেবেন না।”

“আমরা ধরে নিতে পারি পরীক্ষার মধ্যে এটাই তাদের শেষ হরতাল।”

শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।