পরিকল্পনা ছিল খালেদার ওপর হামলার: বিএনপি

খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বকশীবাজার ও আশেপাশের এলাকায় সংঘর্ষের জন্য সরকারকে দায়ী করে বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2014, 11:39 AM
Updated : 24 Dec 2014, 02:03 PM

বুধবার দুপুরের সংঘর্ষের পর বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে দলের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করাই ছিল ‘ক্ষমতাসীনদের ওই আক্রমণের’ উদ্দেশ্য।

এর প্রতিবাদে প্রথমে বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি। ওই দিন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড় দিন উৎসব থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই কর্মসূচি একদিন পিছিয়ে শুক্রবার নেওয়া হয়।

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় বুধবার দুপুরে খালেদা জিয়া বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দেন।

একে কেন্দ্র করে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ওই এলাকায় জড়ো হয়ে মিছিল করছিল। এক পর্যায়ে সরকার সমর্থকরা তাদের ওপর চড়াও হলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এর মধ্যেই গাড়ি নিয়ে আদালতে যান খালেদা।

ওই সংঘর্ষের চার ঘণ্টা পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে ফখরুল বলেন, “মূল পরিকল্পনা ছিল দেশনেত্রীর গাড়িবহরে হামলা। আপনারা দেখেছেন, তার গাড়িবহর সেখানে পৌঁছনোর পাঁচ মিনিট আগে থেকেই আক্রমণ শুরু হয়।”

তিনি দাবি করেছেন, ছাত্রলীগ সভাপতি এ এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে ছাত্র ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও ধারাল অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিএনপি সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়।

আদালতে খালেদা জিয়া

হামলার মুখে বিএনপিকর্মী

হামলার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, গুলশানের বাসা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বের হওয়ার পর অস্থায়ী আদালতে যাওয়ার পথে প্রতিটি ট্রাফিক সিগনালে তার গাড়িকে নিরাপত্তা বাহিনীর বহর থেকে আলাদা করার চেষ্টা হয়েছিল।

“এত কিছুর পরও যখন তারা সফল হতে পারেনি, তখনই বকশীবাজারের কাছে জনগণের স্বতস্ফূর্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে ও পুলিশ-র‌্যাবের সহযোগিতায় তাণ্ডব চালানো হয়।”

হামলায় বিএনপির ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন দাবি করে ফখরুল বলেন, এর মধ্যে অর্ধ শতাধিক গুরুতর আহত হয়েছেন।

গুরুতর আহতদের মধ্যে যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আকম মোজাম্মেলের হাসপাতালে অন্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানান বিএনপি মুখপাত্র। এছাড়া রামপুরার নুরুল ইসলাম ও বাড্ডার ইসমাইলও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানান তিনি।

সরকারকে হুঁশিয়ার করে ফখরুল বলেন, “এই দমন নীতির পথ পরিহার করুন। নইলে যে কোনো পরিস্থিতির দায় আপনাদেরই বহন করতে হবে।”

এমপি ছবি বিশ্বাসের গাড়ি পুড়ছে

বকশীবাজারে সংঘর্ষের সময় পাশের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের গাড়িতে আগুন ধরানো হয়, এ সময় হামলায় তিনিসহ কয়েকজন আহত হন।

এই হামলাকারীরা বিএনপিকর্মী বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেও সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন ফখরুল।

“এই হামলার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। যেসব গাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে, এটা তারা (ক্ষমতাসীন) পুড়িয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে হবে।”

পুরো ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, “সরকার সব সময় বিরোধী দলকে সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত করে। আমরা বলতে চাই, বিরোধী দল যে কখনোই সহিংসতা করে না, তার সর্বশেষ প্রমাণ হচ্ছে আজ বকশীবাজারের ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ পুলিশ-র‌্যাবের হামলার ঘটনা।”

দুপুর ১২টার দিকে খালেদা জিয়া আদালতে ঢোকার পরও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা এবং ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের সরিয়ে দিলে এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর খালেদা আদালত থেকে বেরিয়ে বাড়িতে ফিরে যান।

‘গাজীপুরের জনসভা হবেই’

ছাত্রলীগের হুমকির মধ্যেও ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে জনসভা করতে অটল অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ২৭ ডিসেম্বর ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে জনসভার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি পেয়েছি।

সংঘর্ষের আগে বকশীবাজারে বিএনপিকর্মীদের জমায়েত

“অনেক জনসভা ঢাকার বাইরে করেছি, কোথাও সমস্যা হয়নি। কিন্তু গাজীপুরে জনসভা বানচালে সরকার পেটোয়া বাহিনীকে লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, গাজীপুরের জনসভা হবেই। আমরা জনসভা করবই।”

বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলার জন্য তারেক রহমান ক্ষমা না চাওয়ার গাজীপুরে খালেদার জনসভা ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। ওই দিন বদরে আলম কলেজ মাঠে সমাবেশ করতে অনুমতিও চেয়েছে তারা।

ফখরুল অভিযোগ করেন, খালেদার জনসভা ভণ্ডুল করতে ছাত্রলীগ ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে।

“গত রাতে তারা ২০ দলীয় জোটের জনসভাস্থলে নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালায়, গোলাগুলি করে, ব্যানার-ফেস্টুন জ্বালিয়ে দেয়। ৫ ট্রাক পুলিশের সহযোগিতায় ছাত্রলীগ এই তাণ্ডব চালায় বলে আমাদের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন।”

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুস সালাম, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, শিরিন সুলতানা, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রফিক শিকদার, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ।