আদালতের পথে খালেদা, মিছিল, কড়াকড়ি

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানির দিন থাকায় আদালতের পথে রওনা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2014, 05:51 AM
Updated : 24 Dec 2014, 06:15 AM

এদিকে তার হাজিরাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালতের চারপাশে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা।

পুলিশ এক দিকে ওই এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, অন্যদিকে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বকশীবাজার থেকে ফজলে রাব্বি হল পর্যন্ত রাস্তা আটকে মিছিল করছেন।

সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি ঢাকার বিশেষ জজ বাসুদেব রায় নিলেও তারপর তিনি বদলি হওয়ায় বুধবার শুনানি নেবেন ওই আদালতের নতুন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার।

বাসুদেব রায়কে নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি বিচারক বদল নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেছে, এটা বিচারের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তারের শামিল।

খালেদার আইনজীবীদের একের পর এক আবেদনের মধ্যে মামলার বাদী ও প্রধান সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ চারটি ধার্য তারিখেও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে না পারায় এদিনও তার জবানবন্দি শুনবে আদালত।

তবে এ মামলার বিষয়ে উচ্চ আদালতে করা আবেদনের কথা জানিয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে আবারো সময়ের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।

খালেদার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান জানিয়েছেন, বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন তার গুলশানের বাসা থেকে আদালতের পথে রওনা হয়েছেন।

গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর বেশ কয়েকবার পিছিয়ে ঢাকার বিশেষ জজ বাসুদেব রায়ের আদালতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্যে গত ১১ নভেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

জিয়া এতিমখানা (অরফ্যানেজ) ট্রাস্টের সঙ্গে একই দিনে জিয়া দাতব্য (চ্যারিটেবল) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতির সুযোগে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সকালে ওই এলাকা ঘুরে উর্দু রোড মোড়, ফজলে রাব্বি হলের সামনে এবং আলিয়া মাদ্রাসার প্রবেশ পথে পুলিশের ব্যারিকেড দেখা যায়।

এছাড়া ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূর্ব পাশের সড়কে ঢোকার মুখে কাভার্ড ভ্যান ও হিউম্যান হলার রেখে এবং রাস্তার মাঝে বাঁশ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সাঁজোয়া যান (এপিসি), জলকামান নিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য আদালতের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি র্যা বের টহল যানও দেখা গেছে।

কড়া নিরাপত্তার অংশ হিসাবে আদালতের আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে সকাল থেকেই আদালতের আশেপাশের সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানও দিচ্ছেন।  

বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও আবদুস সালাম সকালেই আদালতে এসেছেন। আইনজীবীদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম মিয়া ও খন্দকার মাহবুব হোসেনও রয়েছেন।

এই দুটি দুর্নীতি মামলা বাতিলে উচ্চ আদালতে গিয়ে বিফল হওয়ার পর বাসুদেব রায়ের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টে গিয়েছিলেন খালেদা।

কিন্তু সব আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পরও বিভিন্ন আবেদন করতে থাকেন খালেদার আইনজীবীরা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি। লন্ডনে থাকা তারেকের পক্ষে আইনজীবীরা হাজিরা দেন। 

মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক আমলা ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এই মামলার আসামি।

সালিমুল ও শরফুদ্দিন জামিনে রয়েছেন। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করে দুদক।

দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন এই মামলায় খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

খালেদাসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী হারুন-অর-রশিদ। এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।