নূর হোসেনের জন্য এরশাদের ‘কান্না’

যার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে  পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন নূর হোসেন, সেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকায় নূর হোসেনের নামে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ না থাকায় ‘খেদ’ প্রকাশ করলেন।   

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2014, 09:26 AM
Updated : 8 Dec 2014, 09:53 AM

সোমবার বনানীতে এক অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেন, “নূর হোসেনকে নিয়ে কতজন কত কথা বলে, অথচ তার জন্য একটি স্মৃতিসৌধ কিংবা মন্যুমেন্ট কেউ তৈরি করেনি।

ঢাকার রাজপথ যেখানে নূর হোসেনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল-  সেই জিরো পয়েন্টের স্থাপনাটিও নিজের তৈরি করা বলে দাবি করেন সাবেক এই স্বৈরশাসক।

তিনি বলেন,  “সেখানে একটা স্মৃতিস্তম্ভ কি তৈরি করা যেত না?”

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীর 'জিরো পয়েন্টে' পুলিশের গুলিতে নিহত হন যুবলীগকর্মী নূর হোসেন।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সেই দিনে বুকে-পিঠে 'স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক'- স্লোগান লিখে মিছিলে শামিল হয়েছিলেন তিনি।

নূর হোসেন ছাড়াও সেই আন্দোলনে যুবলীগ নেতা নূরুল হুদা বাবুল এবং কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটো পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। তারপর থেকে প্রতিবছর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। আর জিরো পয়েন্টের নামকরণ হয়েছে নূর হোসেন চত্বর।

 

এরশাদের দাবি, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো নূর হোসেনের পরিবারের খোঁজ না রাখলেও তিনি রেখেছেন।

“নূর হোসেন মারা গেল, সবাই তাকে স্মরণ করে। কিন্তু তার পরিবারের খোঁজ খবর কি কেউ রেখেছে? আমি রেখেছি। জেল থেকে বের হওয়ার পরই আমি খুঁজে খুঁজে তার বাসা বের করেছি। তার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করেছি, সান্ত্বনা দিয়েছি। প্রতি মাসে আমি নূর হোসেনের বাবাকে পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছি।”

কেবল নূর হোসেন নয়, সেই আন্দোলনের সময় পুলিশের গাড়ি চাপা পড়ে নিহত দেলোয়ারের বাড়িতেও গিয়েছেন বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

“সবাই আমাকে বলেছিল- স্যার আপনি যাবেন না। আপনাকে দেখলে মানুষ উত্তপ্ত হয়ে যেতে পারে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি কারো কথা শুনিনি।

“দেলোয়ারের বাড়িতে গিয়ে তার মা কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলাম- মা তোমার এক ছেলে মারা গেছে, আরেক ছেলে আছে। তোমার দায়িত্ব আমি নিলাম।”

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে থাকা এরশাদ বলেন, এখন ‘প্রতিদিনই’ নূর হোসেন মারা যায়। প্রতিদিনই ‘শোক দিবস’।

বক্তৃতার এ পর্যায়ে কণ্ঠে হাহাকার মিশিয়ে এরশাদ বলেন, “গত ২৪ বছরে শুধু হানাহানি, প্রতিহিংসা, হত্যা-খুনের রাজনীতি দেখেছে এই জাতি। আমাকে স্বৈরাচার বলা হত, কিন্তু আমি শুধু মানুষকে ভালবাসতে চেয়েছি। মানুষকে ভালোবাসি বলেই কখনো সন্ত্রাসের রাজনীতি করিনি। আমার দুঃখ হয় আজ মানুষের জন্য মানুষের মনে প্রেম নেই, ভালবাসা নেই।

“আমি ভালো কাপড় পরলে দোষ, কবিতা লিখলে দোষ। আমি যখন মিলিটারিতে ছিলাম তখনো কবিতা লিখতাম, ডায়রি লিখতাম।”

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেলের স্মরণে বনানীতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আদেলকে স্মরণ করে এরশাদ বলেন, “তিনি শুধু আমার দলেই ছিলেন না। আমার বন্ধুর মত ছিলেন। অনেকে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু আদেল কখনো আমাকে ছেড়ে যাননি।”

অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী, প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ হান্নান, সুনীল শুভ রায় স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।