সরকার ‘ষড়যন্ত্রের দুঃস্বপ্ন’ দেখছে: ফখরুল

নিজেদের ভিত ‘নড়বড়ে’ বুঝতে পেরে সরকার প্রতি মুহূর্তে ‘ষড়যন্ত্রের দুঃস্বপ্ন’ দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2014, 01:21 PM
Updated : 5 Dec 2014, 03:07 PM

তিনি বলেছেন, “সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তারা চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এখন তাদের (সরকার) এতোই ভয়। এরা নাইটমেয়ার দেখছে। কথায় কথায় ষড়যন্ত্র দেখে, দুঃস্বপ্ন দেখে।”

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণতন্ত্র মুক্তি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ফখরুল।

বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে একটি বৈঠক চলার খবর কয়েকটি টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়, যাতে প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানানো হয়।

ফাইল ছবি

বিএনপির পক্ষ থেকে পরে ওই খবরকে ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ বললেও সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার কথা বলা হয়েছে।

শুক্রবার রাজধানীতে দুটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ওই বৈঠককে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে খালেদার বিরুদ্ধে ‘সরকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে উসকানি’র মামলা করার হুমকি দিয়েছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “সরকার বুঝতে পারছে, তারা চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ঘর যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। সেকারণে তারা (সরকার) ষড়যন্ত্রের দুঃস্বপ্ন দেখছে।”

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “যে নির্বাচনে জনগণ অংশ নেয়নি, সেই নির্বাচনকে পুঁজি করে ক্ষমতায় বসে সরকার দেশের বিচার বিভাগ, সংসদ ও  প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছে। সব লুটপাট করছে।

“যখনই আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে, তখনই যুদ্ধাপরাধীর কথা বলে তারা (সরকার) জুজুর ভয় দেখায়। আমরা সরকারকে বলে দিতে চাই, জুজুর ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না।”

ভোটের অধিকার ফেরানোর জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, আমাদের আন্দোলন কাউকে রক্ষা করা কিংবা ক্ষমতায় বসানোর জন্য আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন হচ্ছে মানুষের ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন।”

১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের সরকারের পতনের দিনটিকে বিএনপি গণতন্ত্র মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

এরশাদের শাসনামলের চেয়ে বর্তমান সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা এমন এক সময়ে স্বৈরাচার পতন দিবস পালন করছি, যখন দেশে তার চেয়ে বড় ভয়াবহ স্বৈরাচার জাতির ওপর চেপে বসে আছে।

“এরশাদ যদি স্বৈরাচার হয়, শেখ হাসিনা আরো বড় স্বৈরাচার। এরশাদের সময়ে ৫০ থেকে ১৫০ মানুষ খুন হয়েছিল। শেখ হাসিনার আমলে দুই হাজারের বেশি মানুষ খুন হয়েছে।

“তাই আজ আমাদের স্লোগান হওয়া উচিৎ- নব্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা নিপাত যাক, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ নিপাত যাক।”

বর্তমান সরকারের আমলে গুম-খুনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে গুম হওয়া মানুষের স্বজনদের আহাজারির কথা সংবাদপত্রে দেখেছি। একদিন শেখ হাসিনাকে এজন্য মূল্য দিতে হবে।”

সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধ্য করতে জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান  ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শিরিন সুলতানা ও মীর সরফত আলী সপু বক্তব্য রাখেন।