‘দুই আনার মন্ত্রীর কাছে হাত পেতে বসে আছেন খালেদা’

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক নিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন তার দিকে হাত পেতে বসে আছেন।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2014, 03:25 PM
Updated : 29 Nov 2014, 08:45 PM

শনিবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিসওয়াল সম্পর্কে আশরাফ বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই আনা, চার আনাও না— এক মন্ত্রী আছে নিশা দেশাই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যদিও সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

“নিশা দেশাই বিসওয়ালের দিকে হাত পেতে বসে আছেন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে দুই দুইবারের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে টেলিভিশনে দেখে মনে হয় ২২/২৩ বছরের মেয়ের সামনে খালেদা জিয়া একদম শিশু। হাত পেতে বসে আছেন ক্ষমতাটা যাতে এই মিস দেশাই খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেবেন। যতবারই সাক্ষাত করুন না কেন কোনো লাভ হবে না।”

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী আশরাফ যখন বিসওয়ালকে নিয়ে এখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন সে সময় তিন দিনের ঢাকা সফর শেষ করে উজবেকিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার অপেক্ষায় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে সহকারী মন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা  গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে চেষ্টা করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ।

মজীনাকে ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা’ সম্বোধন করে তিনি বলেন, “কয়দিন আগে উনি (খালেদা জিয়া) ছিলেন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে। মজীনা তো কত চেষ্টা করলো নির্বাচনটা বন্ধ করার জন্য, শেখ হাসিনা যাতে প্রধানমন্ত্রী না হতে পারে তার জন্য। এমন কোনো প্রচেষ্টা নেই- তিনি করেননি। আল্লাহর ওয়াস্তে সবশেষে চাকরির মেয়াদও শেষ, ক্ষমতাও শেষ। আগামী সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেবেন। জীবনে হয়তো আর বাংলাদেশে আসবেনও না। বাংলাদেশ কিন্তু ওই অবস্থায় নেই যে, কাজের মেয়ে মর্জিনা বাংলাদেশের ক্ষমতার রদবদল করবে।”

ক্ষমতার পালাবদলে প্রভাবকের ভূমিকায়  ভারতের বিজেপি সরকারের ওপর ভরসা না করতে খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, “হঠাৎ করে তাদের (বিএনপি) মনে আশা জাগলো যে কংগ্রেস এবার ক্ষমতায় আসতে পারেনি- বিজেপি এসেছে। যখন মজীনা দিয়ে কোনো কাজ হলো না মোদীর কাছে গিয়ে যদি কিছু আদায় করা যায়, সে চেষ্টাই বিএনপি করছে।

“আমি গত সপ্তাহে দিল্লি ছিলাম। ভারতের এমন কোনো মন্ত্রী নেই যার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। মোদী তো মনমোহন সিংয়ের চাইতে আওয়ামী লীগের পক্ষে আরো বেশি কট্টর।”

কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী মন্ত্রী বিসওয়াল।

বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, শ্রমিক অধিকার কর্মীসহ তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

বিসওয়াল শুক্রবার রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন কবে হবে তা জানতে চেয়েছেন বলে জাতীয় পার্টির এক নেতা জানিয়েছেন।

আর বিসওয়ালের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। 

এর আগে গত বছর নভেম্বরে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হরতাল, অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসে সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের চেষ্টা করেছিলেন বিসওয়াল।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এবং টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে।

নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের পশ্চিমা মিত্রদের পক্ষ থেকে দ্রুত একটি ‘অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছিল।

অবশ্য শনিবার ওই নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কিত প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গেছেন বিসওয়াল।

“নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণই এর সময়সীমা নির্ধারণ করবে। আমি বলতে পারি- দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কীভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া যায় তার ওপর আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি,” বলেছেন তিনি।

এদিকে সমাবেশে সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, সরকারের মেয়াদ পূর্তির পরই পরবর্তী নির্বাচন হবে।

“পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেও এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে।”

ওই নির্বাচনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ মুখপাত্র আশরাফ বলেন, “আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন, নির্বাচনের দ্বিতীয় নৌকা যেন হারাতে না হয়।”

সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

২০০৪ সালের ১৪ জানুয়ারি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১০বছর পর শনিবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আগের কমিটি বহাল রাখা হয়েছে।