লতিফ সিদ্দিকীর সদস্যপদ খারিজ, গ্রেপ্তারের দাবি সংসদে

হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য মন্ত্রিত্ব হারানো আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর জাতীয় সংসদের সদস্যপদ খারিজ এবং তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2014, 01:32 PM
Updated : 24 Nov 2014, 02:17 PM

লতিফ সিদ্দিকী রোববার রাতে দেশে ফেরার পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত এক আলোচনায় এই দাবি করেন তারা।

লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, “উনি মৌলবাদীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। মৌলবাদীদের উৎসাহিত করছেন। তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।”

বাবলু এ বিষয়ে সংসদে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যও দাবি করেন। লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ইসলামী দলগুলোর হরতালের হুমকির মধ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ‘আইনগত জটিলতা’ রয়েছে।  

নিউ ইয়র্কের অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ডজনখানেক মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এই নেতার বিরুদ্ধে, কয়েকটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

সংসদ সদস্যপদ থাকায় লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে বলে কথা উঠলেও শিরীন শারমিন চৌধুরী তা নাকচ করেছেন।       

সংসদে জাতীয় পার্টির বাবলুর পর স্বতন্ত্র সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিমও মন্ত্রিত্ব হারানো লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ খারিজের দাবি জানান। রোববার রাতে ফেরার পর তাকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভও জানান তিনি।  

আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী

হাজি সেলিম বলেন, “বিমানবন্দরে আমার জানা মতে সাত-আটটি ডিপার্টমেন্ট কাজ করে। তারা কী করল? আর, বিমান ওখান থেকে আসার আগেই এখানে ফ্যাক্সে একটি তালিকা চলে আসে। আর, উনি তো ছদ্মনাম নিয়ে আসেন নাই।”

“জনগণ বলছে সরকারের গ্রিন সিগন্যাল আছে। কিন্তু, আমি জানি প্রধানমন্ত্রীর কোনো গ্রিন সিগন্যাল নেই,” বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

আরেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “উনি (লতিফ) দেশকে বিপদে ফেলতে চান। দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান। আবার, হেফাজত রক্তের খেলা খেলবে।

“উনি এমপি আছে কি না, এজন্য আপনার (স্পিকার) রুলিং চাই। প্রয়োজনে ব্লাসফেমি আইন তৈরি করতে হবে।”

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীকে বুধবারের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে হেফাজত ইসলাম বলেছে, তা না হলে বৃহস্পতিবার সারাদেশে হরতাল ডাকা হবে।

লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ক্ষোভ দেখে প্রবীণ সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অনির্ধারিত এই আলোচনায় দাঁড়িয়ে এই বিষয়ে আইনি দিকগুলো তুলে ধরেন।

সংসদ সদস্যপদ খারিজের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “সংবিধান স্পিকারকে এমন কোনো ক্ষমতা দেননি, যা তিনি স্বংয়ক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করতে পারবেন। এ সংক্রান্ত যে রিলেভেন্ট আর্কিকেল আছে, সেগুলো যদি প্রযোজ্য হয়- তখনই তার সদস্যপদ যাবে।”

গ্রেপ্তারের দাবির বিষয়ে সুরঞ্জিত বলেন, “গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার হাতকে মুক্ত করে দেওয়া আছে। শুধু স্পিকারকে অবহিত করতে হবে।

“আমি মনে করি, আইন অনুযায়ী আদালতের সব নির্দেশ দল ও সরকার কার্যকর করবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কেউ যদি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কথা ভাবেন, তাহলে সেটা হবে বাস্তব অবস্থা থেকে বেশি দূরে চলে যাওয়া।”