এইচ টি ইমামের কথাই দলীয়করণের প্রমাণ: ফখরুল

প্রশাসনে দলীয়করণের যে অভিযোগ বিএনপি করে আসছে, তার প্রমাণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্যকে তুলে ধরলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2014, 02:46 PM
Updated : 17 Nov 2014, 02:24 PM

একদিন আগে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে এইচ টি ইমামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বৃহস্পতিবার বলেছেন, “এতে সরকারের দলীয়করণের চরম বহিঃপ্রকাশ বলে আমরা মনে করি।

“সরকারের প্রভাবশালীর এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, প্রশাসনের কী অবস্থা? ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের চাকরি দেওয়া হবে, অন্যদের চাকরি দেওয়া হবে না।”

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের’ আলোচনা একথা বলেন ফখরুল।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে সহযোগী সংগঠনটির নেতাদের ‘প্রতিষ্ঠিত’ করার কথা বলে তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “চাকরিসহ যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। আমি প্রয়োজনে কোচিং ক্লাস নিতে রাজি আছি। তারপরে আমরা দেখব, আগে নয়।”

ফখরুল বলেন, “সরকার বিচার বিভাগ দলীয়করণ করেছে, তাদের প্রশাসনের অবস্থাও একই।

“যুবলীগ-ছাত্রলীগ না হলে চাকরি হয় না। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ইন্টিলিজেন্স রিপোর্টের সময়ে দেখা হয়, তার বংশের লোকজন আওয়ামী লীগের কি না। শুনেছি- নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে চাকরির জন্য আবেদন নিয়ে গেলে তিনি না কি বলেন, ছেলেটা কাদের,ছেলেটা আমাদের কি না।”

সেনাবাহিনীতেও দলীয়করণ হচ্ছে বলে শোনা যায়, বলেন বিএনপির মুখপাত্র।

৭ নভেম্বর নিয়ে এই আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বাইরে একটি দল- একথা বললে বিতর্কের সৃষ্টি হবে। এই দলটির সঙ্গে ৭ নভেম্বরের বৈরী সম্পর্ক। আসলে ৭ নভেম্বর থাকলে আওয়ামী লীগ থাকে না, সেজন্য ৭ নভেম্বরে কর্মসূচি করতে তারা দেয় না।”

জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধুলিসাৎ করেছেন বলে এরশাদের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনাও করেন বিএনপি নেতা।  

“ইদানিং এরশাদ একজন নব্য মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানে। জিয়াউর রহমান বদান্যতায় তিনি (এরশাদ) প্রথমে উপ সেনাপ্রধান এবং পরবর্তীতে সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পেছনে তার কী ভূমিকা ছিল, তা দেশবাসী জানে।”

জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে এরশাদের ক্ষমতারোহনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এরশাদ এদেশের গণতন্ত্রকে কলুষিত ও ধ্বংস করেছে। ৯ বছর ছাত্র-জনতার ওপর স্টিমরোলার চালিয়েছে। বরণ্য শিল্পী তাকে নিয়ে বিশ্ববেহায়ার ছবি এঁকেছিলেন।”

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে এরশাদের নানামুখী বক্তব্য তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “যখন আন্দোলন তুঙ্গে তখন এরশাদ বলেছিলেন, আমি নির্বাচনে যাব না। আবার তার প্রভু যখন ঘাড় ধরে চাপ দিল, তখন বলল, আমি নির্বাচনে যাব, আমি নির্বাচনে যাব।”

বর্তমান সংসদ জনপ্রতিনিধিত্বহীন দাবি করে তিনি বলেন, “ এই সংসদকে কোনোভাবে জনগণের সংসদ বলা যাবে না। এই সরকারও নির্বাচিত নয়। আমরা এই সরকারকে বলি একটি দখলদারী সরকার।”

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবউন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুনির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি আলী রেজাউর রহমান রিপন, উত্তরের সভাপতি ইয়াসিন আলী, কেন্দ্রীয় নেতা আনু মোহাম্মদ শামীম, লিটন মাহমুদ, রফিক হাওলাদার বক্তব্য রাখেন।