লতিফ সাংসদ থাকছেন: ফিরোজ

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ‘ফ্লোর ক্রসিংয়ে’ না পড়ায় মন্ত্রিত্ব হারানো আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বাদ পড়লেও সাংসদ পদে থাকছেন বলে জানিয়েছেন সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2014, 09:53 AM
Updated : 14 Oct 2014, 11:36 AM

তবে এ নিয়ে ‘কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে’ স্পিকার দেশে ফিরে এসে ‘আইন বিশ্লেষণ করে’ তার সমাধান দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফিরোজ বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীর সদস্যপদ থাকছে। সাংসদের সদস্যপদ বাতিলের বিদ্যমান যে আইন, তা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ তিনি দলের বিরুদ্ধে ভোট দেননি, পদত্যাগও করেননি।

“দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদে কিছু করেননি। যে কারণে তার বিষয়টি ‘ফ্লোর ক্রসিংয়ে’ পড়েনি।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অবশ্য এর আগে বলেছিলেন, লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বহিষ্কৃত হলে তার আসন শূন্য হবে।

কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যায়োশিয়েশনের (সিপিএ) চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হওয়ায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আগামী ২২ অক্টোবর সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি জানাতেই সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধান হুইপ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ বলেন, দল থেকে বহিষ্কার হলে সংসদ সদস্য পদও যাবে কি না- সে বিষয়ে সংবিধান বা সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে ‘স্পষ্টভাবে’ কিছু বলা নেই।

“লতিফ সিদ্দিকীর সদস্যপদ নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরি হলে স্পিকার দেশে ফেরার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।”

এ বিষয়ে আইনজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রয়োজন হলে স্পিকার মতামত নিতে পারেন।”

ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে যোগ দিতে শিরীন শারমিন বর্তমানে জেনেভায় রয়েছেন। সেখান থেকে ভারত হয়ে আগামী ২১ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার।

হজ নিয়ে এক মন্তব্যের পর তুমুল আলোচনার মধ্যে রোববার মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। একই দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকেও তাকে বাদ দেওয়া হয় এবং তার প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।

তাকে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না- তা জানতে চেয়ে মঙ্গলবার একটি কারণ দর্শাও নোটিশও পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দল থেকে বহিষ্কৃত হলে সংসদ সদস্য পদ হারাতে হবে- এমন কথা সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কৃত হলে তার আসন শূন্য হবে।

সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে সংবিধানের ৭০ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।

ওই অনুচ্ছেদে দল থেকে বহিষ্কৃত হলে সদস্য পদের কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই; যা লতিফ সিদ্দিকীর বেলায় হতে যাচ্ছে।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগেও কয়েকজন সংসদ সদস্য দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েও সাংসদ পদে টিকে ছিলেন।

চারদলীয় জোটের আমলে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

তার সংসদ সদস্য থাকবে কি না- বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন সংবিধানের ওই বিধান (৭০ অনুচ্ছেদ) অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ রাখার সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন স্পিকার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়নি।

একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে।

সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকে।

প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২২ অক্টোবর সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্পিকারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।

অন্যদের মধ্যে হুইপ ইকবালুর রহিম, আতিউর রহমান আতিক, মাহাবুব আরা বেগম এবং গাজীপুরের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।