দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার পৃথক দুই অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হজ নিয়ে ওই মন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা অবিলম্বে তাকে বরখাস্ত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
আর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের আবেগে আঘাত হেনেছেন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। নির্বাচনের আগে এই দলটির নেত্রী হাতে তসবিহ, মাথায় হিজাব পরে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যান। এরপর ক্ষমতায় বসে সব ভুলে যান।”
ক্ষমতাসীনদের ‘ছলনা’ এখন জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য আওয়ামী লীগের চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। আমরা এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
গত রোববার নিউ ইয়র্কে স্থানীয় টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী।”
লতিফ সিদ্দিকীর ওই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
ওই ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, “এ হজে যে কতো ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। এই হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছেন। এদের কোনো কাজ নাই। কোনো প্রডাকশন নাই, শুধু ডিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।”
জামায়াতের বিবৃতিতে মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
অপর বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলাম মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা চেয়ে বলে, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মন্ত্রীর জন্য সালমান রুশদী ও তসলিমা নাসরিনের পরিণতি অপেক্ষা করছে।
মঙ্গলবার সকালে শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নতুন কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আগেও বলেছিলেন যে যারা হরতাল করবে, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তার করতে হবে। ওই বক্তব্যের পর তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি।”
আর রুহুল কবির রিজভী দলীয় কার্যালয়ে বলেন, “মন্ত্রী মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। তার বক্তব্যে মুসলমানদের অবজ্ঞা করা হয়েছে।”
পরে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, “মন্ত্রীর এহেন বক্তব্য মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় আবেগে চরম আঘাত হেনেছে।
“এই বক্তব্য ইসলাম ধর্মের প্রতি চরম অসম্মানজনক। আমরা এহেন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
অতীতেও লতিফ সিদ্দিকীর ‘অসংলগ্ন’ কথাবার্তা বলেছেন দাবি করে ফখরুল বলেন, “তার লাগামহীন কদাচার বক্তব্যকে ক্ষমতার শীর্ষ থেকে সবসময় উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে বলেই এখন তিনি এখন সকল সীমানা অতিক্রম করে পবিত্র হজ ও হাজীদের কটাক্ষ এবং মহানবী (সা:) সম্পর্কে বিদ্রুপাত্মক ভাষায় তাচ্ছিল্য করা ও তাবলিগ জামায়াতকে নিয়ে কটূক্তি করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন।”
“ক্ষমতাসীন নেতা-মন্ত্রীরা শুধু ধরাকে সরা জ্ঞানই করছেন না, তারা নিজেদের এখতিয়ারও ভুলে গেছেন,” বলেন ফখরুল।