এত তড়িঘড়ি কেন- প্রশ্ন ড. কামালের

বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে দাবি করে এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম ড. কামাল হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2014, 01:57 PM
Updated : 13 Sept 2014, 03:05 PM

“আমি কোনোভাবে মানতে পারছি না- সুপারসনিক গতিতে কেন সংশোধনী পাস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিন মাস পরে আইন হলে এখন এত তড়িঘড়ি কেন?” শনিবার বিবিসির সংলাপে বলেন তিনি।

বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা ১৯৭২ সালের মতো আইনপ্রণেতাদের হাতে ফিরিয়ে আনতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। চলতি অধিবেশনেই তা পাস হওয়ার কথা। 

১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য কামাল হোসেন শুরু থেকেই সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছেন।

বিবিসির সংলাপে তিনি বলেন, “সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। সংশোধনীর পরে আইন প্রণয়নের কথা থাকলেও এ সংক্রান্ত কোনো খসড়া পর্যন্ত করা হয়নি।

“দলীয়ভাবে সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে। নিরপেক্ষভাবে কিছু ভাবা হচ্ছে না। ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে সংসদের কার্যকলাপে আলোচনার দরকার রয়েছে এখন।”

সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আগে সবার সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বলেছেন, এই সংশোধনের আলোকে বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে আইন প্রণয়নের সময় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হবে।  

গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিবিসির সংলাপে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু প্রস্তাবিত বিলের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বাহাত্তরের সংবিধানে ৯৬ অনুচ্ছেদে যা ছিল তা-ই এবার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এ নিয়ে এখন কেন প্রশ্ন রাখছেন তিনি।”

মতিন খসরু বলেন, কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের কারণে কোনো অভিযোগ এলে তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলেই বিষয়টি সংসদে আসবে। আগেও তাই ছিল।

“সংশোধনীর পর সে অনুযায়ী আইন হবে, তাতে বিচারপতিদের সমন্বয়ে কমিটি হবে। সংসদ তো কিছু করবে না।”

বিবিসির সংলাপে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেন।

“বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে জানি না। যেটুকু ছিল এ সংশোধনীর মাধ্যমে তারও চিরবিদায় ঘটছে।”

বিচারপতি নিয়োগের কোনো আইন প্রনয়নের আগে অপসারণের বিষয় নিয়ে সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগ নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেন তিনি।

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি বলছে, সংবিধানের এই সংশোধনের মাধ্যমে বিচার বিভাগে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

বিবিসির সংলাপে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইনও সংসদের ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

“ষোড়শ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বিচার বিভাগ হুমকির মুখে পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করবে।”

রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন ও বিবিসি বাংলার যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশ সংলাপ’ উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ।

প্রায় দেড়শ’ দর্শকের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাজনীতির পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ এবং রেল দুর্ঘটনা নিয়েও মতামত উঠে আসে।