জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসনের ঘটনাগুলোও তুলে ধরে এই আহ্বান জানান তিনি।
১৫ অগাস্ট ঘিরে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব স্মরণে’ এই ছাত্র সমাবেশে নিজের ছাত্রলীগ করার কথাও বলেন হাসিনা।
এখন বহু ঘটনায় সমালোচিত ছাত্রলীগ নেতাদের বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শ নিয়ে সংগঠন গড়ে তোলার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “যারা পরাজিত শক্তির দোসর ছিল, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায় না, যারা পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খানের পা চাটা কুকুর, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। তাদের অস্তিত্ব এখনো আমাদের সমাজে আছে।
“পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খানের পালিত এই কুকুরের দল সরকারের কোনো কিছুই সহ্য করতে পারে না। যারা ১৫ অগাস্ট ঘটিয়েছে, যারা ২১ অগাস্ট ঘটিয়েছে, যারা দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করতে চায়- তাদের সম্পর্কে ছাত্র সমাজসহ দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।”
বঙ্গবন্ধুকন্যা তার ৪০ মিনিটের বক্তব্যে বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট একসঙ্গে পরিবারের সবাইকে হারানোর কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুতও হয়ে পড়েন তিনি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু কিছুটা অসুস্থতা নিয়েই ঐতিহাসিক সেই ভাষণ দিয়েছিলেন বলে জানান হাসিনা, যে ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন জাতির জনক।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে ওই ভাষণটি স্থান করে নেয়ায় অভিভূত হাসিনা বলেন, “একটি ভাষণ, একটি জাতিকে প্রেরণা জুগিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের পথে নিয়ে গিয়েছিল।”
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ঠেকাতেই পরাজিত শক্তির মদদে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, বলেন তিনি।
“যখন দেশি-বিদেশি শত্রুরা দেখল- কোনোভাবেই বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা থামানো যাবে না। তখনই জাতির পিতাকে হত্যা করল।”
মা-ভাই-ভ্রাতৃবধূদের হত্যার কথা বলতে গিয়ে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে হাসিনা বলেন, “আমার মায়ের কী অপরাধ ছিল? আমার দুই ভাইয়ের নবপরিণীতা স্ত্রীদের কী অপরাধ ছিল?”
এরপর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশে ফিরতে বাধা পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি দেশে আসতে চেয়েছিলাম, আমাকে আসতে দেয়নি।”
“শুনেছি, জিয়াউর রহমান ভুট্টোকে অনুরোধ করে। ভুট্টো গাদ্দাফীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই খুনিদের আশ্রয়ের জন্য। শমশের মবিন চৌধুরী ওই বেইমান-খুনিদের বিদেশে নিয়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে।”
মুক্তিযুদ্ধে আহত শমসের মবিনকে বঙ্গবন্ধু জার্মানিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। পরে বঙ্গবন্ধুই তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বলে হাসিনা জানান।
পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে অবসর নিয়ে শমসের মবিন বর্তমানে জিয়ার গড়া দল বিএনপির সহসভাপতি পদে রয়েছেন।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়ার জন্যও জিয়াকে দায়ী করেন হাসিনা।
“জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয়। সূর্য সেন হলের সাত খুনের আসামিকে ছেড়ে দেয়। জিয়াউর রহমান খুনের রাজত্ব কায়েম করে।”
নিজের ওপর বিভিন্ন সময় হামলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছে।
“আমার বাবা আমাকে যে ত্যাগের শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তা দিয়েই রাজনীতি করি। যে নেতৃত্ব নিজের দিকে তাকায়- সে নেতৃত্ব দেশকে কিছু দিতে পারে না।”
সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সংগঠনের প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’ শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং তারানা হালিম বক্তব্য রাখেন।