মুজিব পরিবার একটি অভিশাপ: তারেক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ব্যর্থ’ রাজনীতিক আখ্যায়িত করার পর এবার তার পরিবারকে ‘খুনি পরিবার’, আওয়ামী লীগকে ‘কুলাঙ্গারের দল’ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কুলাঙ্গারদের নেতা’ আখ্যায়িত করলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সৈয়দ নাহাস পাশা লন্ডন প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2014, 05:27 AM
Updated : 25 August 2014, 05:27 AM

রোববার লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটিতে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক বলেন,  “এই পরিবারটি শুধু খুনি পরিবার নয়, এই পরিবারটি একটি অভিশপ্ত পরিবার বাংলাদেশের জন্য।”

১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং তারপর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার ঘটনা নিয়ে অনুষ্ঠানে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন তারেক। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যের জবাবে তিনি পাল্টা অভিযোগ তোলেন।     

তারেক বলেন, “শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে খন্দকার মোশতাককে কুলাঙ্গার বলে উল্লেখ করেছিল।… যে ব্যক্তিরা শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের প্লট তৈরি করেছিল, যে ব্যক্তিরা খন্দকার মোশতাকের শপথে অংশ নিতে বঙ্গভবনে গিয়েছিল। সেই ব্যক্তিরাই কিন্তু এখন শেখ হাসিনার চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে।

“তাহলে কি আওয়ামী লীগ টোটালি একটা কুলাঙ্গার দল? শেখ হাসিনা কুলাঙ্গারদের নেত্রী। আওয়ামী লীগ টোটালি ইজ এ দল অফ কুলাঙ্গার।”

তারেকের দাবি, পঁচাত্তরে আওয়ামী লীগের লোকেরাই ‘একজন আরেকজনকে’ হত্যা করেছে, একজন আরেকজনের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেছে।

“তখন বিএনপির সৃষ্টি হয়নি এবং জিয়াউর রহমান এসব থেকে তখন অনেক দূরে।”

সম্প্রতি গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে খোন্দকার মোশতাক ও জিয়ার ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাক, জিয়াকে সেনাপ্রধান করে। মোশতাক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, তার মানে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার সম্পৃক্ততা আছে।”

জীবিত থাকলে জিয়াকেও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আসামি করা হতো বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে তারেক বলেন, পঁচাত্তরে ‘নিজেদের ব্যর্থতা’ আড়াল করতেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখন ‘বিভিন্ন মিথ্যা কথা’ বলে বেড়াচ্ছে।

তারেকের দাবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর বঙ্গভবনে খন্দকার মোশতাক আহমেদের শপথ অনুষ্ঠানে কর্নেল তাহের, জাসদের এখনকার সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও উপস্থিত ছিলেন।

“আজকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে শেখ হাসিনা শুধুমাত্র নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, নিজের ক্ষমতার মোহের কারণে তার পিতার হত্যাকারী, এবং সেই হত্যার প্লট যারা তৈরি করেছিল সেইসব ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা করতে পিছপা হয় না।”

আওয়ামী লীগের ‘ব্যর্থতার’ কারণেই পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহি-জনতা জিয়াউর রহমানকে ‘বাংলাদেশের নেতৃত্ব’ দিয়েছিল বলে দাবি করেন তার ছেলে তারেক।  

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সেদিন ব্যর্থ হয়েছিল, ঠিক যেভাবে তারা ১৯৭১ সালে ব্যর্থ হয়েছিল স্বাধীনতাকামী জনগণকে নেতৃত্ব দেবার জন্য। তারা কখনোই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভাল কিছু করতে পারেনি। সব সময় তারা নিজেদের স্বার্থের জন্যই লড়াই করেছে।”

‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ নামের একটি বই থেকে উদ্ধৃত করে তারেক বলেন, “পাকিস্তান আমলের ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে শেখ মুজিব চেয়ারের পায়া দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিলেন। শুধু এটি নয়, স্বাধীনতার পরে শেখ মুজিব ভিন্ন মতাবলম্বী প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিলেন।” 

অবশ্য রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদের লেখা ওই বইয়ে তারেকের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় না।

১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি বিপ্লবী বাম নেতা সিরাজ শিকদারকে হত্যার মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ সংঘটিত হয় বলেও দাবি করেন তারেক। 

তিনি বলেন, “শেখ মুজিবের মতো একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ সে সময় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- ‘কোথায় সিরাজ শিকদার’। আইনের তোয়াক্কা সেদিন তিনি করেনি।”

তারেক ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন এবং ২০১৩ সালের মে মাসে মতিঝিল থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সরিয়ে দিতে ‘নির্বিচারে গুলি করে আড়াই তিন হাজার মানুষকে’ হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেন।

“এসব ঘটনা থেকে প্রমাণ হয়, বাংলাদেশের খুনি পরিবার হলো শেখ মুজিবের পরিবার, শেখ হাসিনার পরিবার।”

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণ করে গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। দুটি ঘটনার জন্যই জিয়াউর রহমানের পরিবারকে দায়ী করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই খুনি পরিবার থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করতে হবে। খুনিদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না।”

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে সেই গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন, অঙ্গহানি হয় অনেকের। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে হত্যাই এই হামলার লক্ষ্য ছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর তদন্ত করে তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম আসামির তালিকায় যোগ করা হয়।

ওই হত্যা মামলার পলাতক আসামি তারেক লন্ডনের অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন, “২১ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরিভাবে শেখ হাসিনা নিজে দায়ী। শেখ হাসিনা আগে থেকেই জানত যে ওইখানে একটা ঘটনা ঘটবে। তা না হলে মাত্র দেড় ঘণ্টা আগে কেন মুক্তাঙ্গন থেকে জনসভার স্থান বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সরিয়ে নেয়া হলো?”

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ব্যানারে ‘স্ট্র্যাটেজি ফর প্রোসপারাস বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক এম এ মালেক।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিবিসি বাংলা সার্ভিসের সাবেক সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের আসার কথা থাকলেও ‘অসুস্থতার কারণে’ তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

দুই পর্বে বিভক্ত বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে  তারেক দেশের কৃষি, শিল্প, বিদুৎসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে নিজের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।