৮ মাস দেশে নেই ব্যারিস্টার রাজ্জাক

আট মাস ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী নেতাদের প্রধান আইনজীবী ও দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2014, 11:46 AM
Updated : 10 August 2014, 01:00 PM

তার এক সহকর্মী অভিযোগ করেছেন, দেশে ফিরতে সরকার তাকে বাধা দিচ্ছে।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের খবর তাদের কাছে নেই।

যুদ্ধাপরাধ বিচারে জামায়াত নেতাদের ডিফেন্স টিমের প্রধান রাজ্জাককে নিয়ে কথা বলেন তার সহকর্মী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, যিনি প্রথম দিক থেকেই ওই টিমে কাজ করছেন।

জ্যেষ্ঠ বদরনেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়ার ৫ দিন পর গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ত্যাগ করেন রাজ্জাক।

দেশ ছাড়ার পর ব্রিটিশ নাগরিকত্বধারী এই আইনজীবী মূলত লন্ডনেই থাকছেন, তবে সময়ে সময়ে অন্য দেশেও যাচ্ছেন।

তাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, দেশ ছাড়ার পর প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে তার বিরুদ্ধে হরতালের দুটি মামলা দেয়া হয়।

এছাড়া তিনি যাতে না ফেরেন-সে জন্য তার বাসায় ফোন করে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সহকর্মী তাজুলের। এই দুই কারণে তিনি দেশে ফিরছেন না বলে জানান তিনি।

তাজুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্তে হয়েছে।

তিনি বলেন, “উনার সফল আইনি লড়াই নিশ্চয়ই সরকারকে বিব্রত করেছে। হয়তো সে কারণেই তিনি যাতে ফিরতে না পারেন এ জন্য তার নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এমনভাবে মামলা দেয়া হয়েছে, যাতে দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা সহজ হয়।”

কখন তিনি ফিরতে পারেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে ফেরার চেষ্টা সব সময়ই তার রয়েছে। তিনি দেশে ফিরতে চান। তবে যেসব কারণ তাকে ফিরতে বাধা দিচ্ছে, সেই কারণগুলো তো দূর হয়নি।

“পরিস্থিতি যদি অনুকূলে না হয় তাহলে কিভাবে আসবেন? আমরা বুঝতে পারছি, দেশে এসে সত্যিকার অর্থে একটা লিগ্যাল ফাইট তিনি দিতে পারবেন না। তার আগেই তাকে হয়রানির স্বীকার হতে হবে।”

রাজ্জাকহীন ডিফেন্স টিম এখন কিভাবে চলছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল বলেন, “বিগ পার্থক্য। উনি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হওয়ার কারণে আপিল বিভাগে আন্তর্জাতিক আইনকে যুক্ত করে উনি যে লেভেলে যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবেন। সেই বিকল্প আমরা কাউকে দিয়ে পূরণ করতে পারছি না। সুতরাং উনার মান অনুসারে উনার সার্ভিস থেকে আমার ক্লায়েন্টরা বঞ্চিত হচ্ছে।”

ট্রাইব্যুনালে এই টিম কিভাবে কাজ শুরু করে, বর্তমানে এই টিম কিভাবে কাদেরকে নিয়ে কাজ করছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল বলেন, “তখন ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেবের নেতৃত্বে আমরা এই টিম গঠন করি। যারা একটি বিদেশি টিমের গাইডেন্সে কাজ করতো। যেখানে ছিলেন স্টিভেন কে কিউসি, জন ক্যামেগ ও টবি ক্যাডম্যান।

“এই ফরেন টিম ও আমাদের টিম মিলে ডিফেন্স টিম হিসাবে যাত্রা শুরু হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত সবগুলো মামলাই ছিল জামায়াত নেতাদের। সবগুলো মামলাতেই আমরা ডিফেন্ড করেছি। গ্রাউন্ড টিমে ডিফেন্স টিমের প্রধান হিসাবে রাজ্জাক সাহেব কাজ করেছেন।”

ব্যারিস্টার রাজ্জাকের অনুপস্থিতিতে এসএম শাহজাহান জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় শুনানি করেছেন। কামারুজ্জামানে মামলায় যুক্ত হয়েছেন নজরুল ইসলাম। কাদের মোল্লার মামলাসহ তিন মামলাতেই সিনিয়র হিসাবে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।

দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলা না করে কেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক বিদেশে অবস্থান করছেন-এ প্রশ্নের জবাবে তাজুল বলেন, “ফেইস করা তো সমস্যা না। কিন্তু আমি জানি, সবাই জানে যে, রাজ্জাক সাহেব কোনোদিন মিছিল করে নাই, গাড়ি ভাঙে নাই। এরপরও মামলা দেয়া হয়েছে। পুলিশ রিপোর্ট দেয়া হয়েছে।

“তার মানেটা কী? তারা নিশ্চিতভাবেই তাকে হয়রানি করবে এবং হয়রানি করে তাকে একটা জায়গা থেকে বিরত রাখবে। এটা যদি আমি বুঝতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের কোথাও গিয়ে কি আমি এগুলো থেকে বাঁচতে পারব?

“যদি তারা হয়রানি করার চেষ্টা করে, একের পর এক মামলা দিতে থাকে। আমাদের অনেকের নামে একশত-দুইশত-তিনশত মামলাও দেয়া হয়েছে। সরকার যদি ইচ্ছা করে তাকে কোনোভাবে বেরুতে দিবে না। তাহলে তাকে তো হয়রানি করতেই পারে।”

রাজ্জাকের দেশে ফেরার বিষয়ে তাজুলকথিত বাধা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিবাসন ও নিরাপত্তার প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের কোনো বিষয় আমার জানা নেই।”

রাজ্জাকের অবর্তমানে অন্য কেউ প্রধান হিসাবে কাজ করছেন কি না- এ  প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, “রাজ্জাক সাহেবই আমাদের প্রধান ছিলেন। উনি না থাকাতে সরাসরি প্রধান কেউ নেই। কিন্তু সিনিয়র মোস্ট আইনজীবী হিসাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন সাহেব, তাকে জ্যেষ্ঠ হিসাবে সম্মান করি। আর ভেতরে সমন্বয়ের জন্য আমরা আছি, চালাচ্ছি। সুনির্দিষ্টভাবে প্রধান বলে কেউ নাই।”