সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ ও দলনের নীতিমালা: বিএনপি

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরোধী পক্ষের বক্তব্য ও সংবাদ  প্রচার এবং সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা বন্ধ করতে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে অভিযোগ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2014, 01:36 PM
Updated : 5 August 2014, 03:18 PM

মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, “অবৈধ সরকার ক্ষমতাকে ধরে রাখতে সম্প্রচার নীতিমালার নামে মানুষের মত প্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করছে, এটা কোনোভাবে নীতিমালা হতে পারে না।”

আগের দিন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া ওই নীতিমালার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “অবৈধ মন্ত্রিসভা যে সম্প্রচার নীতিমালাটি অনুমোদন করেছে, এটি উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতার দিক থেকে সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ ও দলন নীতিমালা।”

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই নীতিমালা বাতিল করা হবে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এম কে আনোয়ার।

তিনি বলেন, “ওই নীতিমালা বাতিল করে মানুষের মত প্রকাশের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে।”

সোমবার নানা বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে টেলিভিশন ও রেডিও’র জন্য প্রচার নীতিমালা অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।

নীতিমালার আওতায় একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের বিধান রাখা হয়েছে, তা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় ওই দায়িত্ব পালন করবে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী আবদুল মঈন খান বলেন, “তথাকথিত সম্প্রচার নীতিমালায় স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের যে বিধানাবলী রাখা হয়েছে, তা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে।

“ওই কমিশন হবে সম্পূর্ণ সরকারের পছন্দের ও আজ্ঞাবহ একটি কমিশন। ওই কমিশনকে বিধি প্রণয়নসহ সম্প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সীমাহীন কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এটা মিডিয়ার স্বাধীনতা  হরণ ও সরকারের আজ্ঞাবহ প্রোপাগান্ডা মেশিনারিতে পরিণত করার এক বিপজ্জনক অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে।”

এই নীতিমালা বাস্তবায়নে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যমগুলো সরাসরি সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে-মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এতে মতপ্রকাশ, সংবাদ প্রচার ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা পুরোপুরি কেড়ে নেয়া হচ্ছে।”

সম্প্রচার নীতিমালায় নতুন লাইন্সেস পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে তারও  সমালোচনা করেন মঈন খান।

তিনি বলেন, “এই নীতিমালায় নতুন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানসমূহকে লাইসেন্স দেয়ার কর্তৃত্বই কেবল নয়, যে-সব প্রতিষ্ঠান এখন সম্প্রচারে রয়েছে তাদের আবারো নতুন করে লাইসেন্স নেয়ার বিধান করে সরকার ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে ফেলেছে। কোনো সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান আজ্ঞাবহ ও ক্রীড়নক না হলে তাদের লাইসেন্স দেয়া হবে না।”

খসড়া নীতিমালায় নতুন করে লাইসেন্স নেয়ার বিষয়টি থাকলেও অনুমোদিত নীতিমালায় তা নেই।

নীতিমালায় আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ, উৎসাহ প্রদান বা সহানুভূতি সৃষ্টিকারী অনুষ্ঠান ও বক্তব্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য ও হিংসাত্মক ঘটনা প্রদর্শন ও প্রচারে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেন এই বিএনপি নেতা।

এসব বিধি-বিধানের যথেচ্ছ অপব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “সম্প্রচার নীতিমালায় সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বা মতামত প্রচার করা যাবে না বলে বিধিনিষেধ আরোপ করে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ, প্রেস কনফারেন্স সরাসরি কিংবা ধারণ করে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।”

সাবেক তথ্যমন্ত্রীর উল্লিখিত এ বিষয়টিও অনুমোদিত নীতিমালায় নেই।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন বিষয় প্রচারে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের মতো জঘন্য অপরাধকে’ উৎসাহিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মঈন খান বলেন, “আমরা মনে করি, এতে জনগণের জান-মাল-সম্পদের নিরাপত্তা আরো বিপন্ন হবে এবং জনগণের কাছে বিভিন্ন বাহিনীর জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা মোটেও থাকবে না।”

সম্প্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবিতে বিএনপি কোনো কর্মসূচি দেবে কি না জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, “আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে আছি। এর মধ্যে সম্প্রচার নীতিমালার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সাবেক সাংসদ হেলেন জেরিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।