মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিএলএফ বাহিনীর তালিকা আনা সংক্রান্ত একটি বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব এদিন সংসদে গ্রহণ করা হয়।
প্রস্তাব উত্থাপনকারী জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের বক্তব্যে জাসদ সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদ জানালে সংসদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তখন স্পিকারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ফিরোজ রশীদ তার প্রস্তাব উত্থাপনের সময় বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের পরে যেন প্রতিবিপ্লব না হয় সেজন্য বিএলএফ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
“কিন্তু সেই বাহিনীর একজন প্রধান সিরাজুল আলম খান বিএলএফ থেকে বের হয়ে জাসদ তৈরি করে। এই জাসদ আর গণবাহিনী আমরা যারা ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ করতাম, তাদের মাঠে ঘাটে হত্যা করেছে।”
এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা ফিরোজ রশীদ বলেন, জাসদ সৃষ্টি না হলে গণবাহিনী সৃষ্টি হত না, না না হলে কেউ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাহস দেখাতে না।
সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক বলেন, “সিরাজুল আলম খান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে প্রতিবিপ্লবের পথ সুগম করে দিয়েছিলেন। সেদিন জাসদকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জাসদের পিছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। যারা বাংলাদেশকে মানেনি, মুসলীম লীগ পরিবার, সবাই রাতারাতি জাসদ হয়ে গেল।
“আজকে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের ভুলের জন্য জাতিকে খেসারত দিতে হচ্ছে। ৪৩ বছর ধরে খেসারত দিচ্ছি।”
মন্ত্রী এসময় প্রস্তাবটি গ্রহণ করার পক্ষে মত দিলে স্পিকার সেটি ভোটে দেন। তখন তা কণ্ঠভোটে গ্রহণ করা হয়।
এরপর জাসদের সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খান বাদল পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বলেন, “বিরোধী দলের একজন সদস্যের প্রস্তাব নিয়ে সরকারের শরিক একটি দলকে আনন্দচিত্তে জবাই করা হচ্ছে। দলটির ঠিকুজি উদ্ধার করলেন।
“আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আপনি যদি ইতিহাসের মাইন ফিল্ডে হাঁটেন তবে যে কোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত জাসদ যা করেছে, ইতিহাস বলবে আমরা সঠিক না ভুল। আমাদেরও ২০ হাজার লোক মারা গেছে।”
জাসদের কার্যকরি সভাপতি বাদলের বক্তব্যের সময় আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ এবং জাতীয় পার্টির সদস্যরা তাকে গণবাহিনী নিয়ে কথা বলতে বলেন।
জাতীয় পার্টির কয়েকজন সদস্য চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বলেন, গণবাহিনীর কথা বলেন।
“৮২ থেকে ৯০ পর্যন্ত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এখানে অনেকে আন্দোলন করেছে,” এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসন ধরে বাদল একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পার্টির সদস্যরা হৈ চৈ করতে থাকেন।
ফিরোজ রশীদ চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে এসে কথা বলতে শুরু করলে বাদল স্পিকারকে বলেন, “আই নিড ইউর প্রটেকশন।”
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় জাতীয় পার্টির সদস্যদের নিজ আসনে বসার অনুরোধ করেন।
বাদল আরো বলেন, “আলোচনা করতে চাইলে হবে। এরকম সিচুয়েশন ক্রিয়েট করতে চাচ্ছিলেন? পেছনের ঘটনা কী?”
শেষে বাদল বলেন, “আমি ও হাসানুল হক ইনু টেলিভিশনে বলেছি, পিতার (বঙ্গবন্ধু) বিরুদ্ধে সমালোচনা করা ভুল হলে আজ তার কাফফারা দিচ্ছি।”