নিরাপত্তা নিয়ে ‘শঙ্কিত’ শামীম ওসমান

সাত খুনের প্রেক্ষাপটে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আবার শঙ্কার কথা জানালেন নারায়ণগঞ্জে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2014, 03:29 PM
Updated : 14 May 2014, 03:30 PM

বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তিনি এই শঙ্কার কথা জানান।

কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজনকে অপহরণের পর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

“কিন্তু সেই জিডির এখনো কোনো তদন্ত হয়নি। একজন এমপির ক্ষেত্রে যদি এমন হয় তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী,” প্রশ্ন করেন শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিজেকে ‘তথ্য সন্ত্রাসের’ শিকার বলেও দাবি করেন তিনি।

“আমরা ভিকটিম। কখনো আমরা তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছি, আবার কখনো পিস্তলের গুলি খাচ্ছি।”

নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই জেলার কেউ জড়িত নন বলেও দাবি করেন শামীম ওসমান।

নিহত কাউন্সিলর নজরুল ছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থক। এই হত্যামামলার প্রধান দুই আসামি নূর হোসেন ও ইয়াসিন মিয়াও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন। পরে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

পলাতক নূর হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর তিনি কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, নূর হোসেনকে তিনি নিজের লোক মনে করলেও পরে তার ভুল ভাঙে। 

তার আগে অপহরণের ঘটনা ঘটার পর নজরুলের পরিবার নূর হোসেনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললে শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকলেও একজন আরেকজনকে অপহরণের মতো ঘটনা ঘটাবেন বলে তিনি মনে করেন না।

তবে আইনশৃঙ্খলা সভা থেকে বেরিয়ে শামীম ওসমান বলেন, নূর হোসেন সম্পর্কে তিনি সংসদে আমি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

“তখন মন্ত্রী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।”

নূর হোসেনের নিয়ন্ত্রণাধীন ট্রাক স্ট্যান্ডটি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় জানিয়ে শামীম বলেন, “অথচ সেটির কোনো ইজারা দেয়া হয় না। কেন ইজারা দেয়া হয় না?

“সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত মেয়র এবং বিজ্ঞ লোক রয়েছে। তাহলে তারা কেন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেননি।”

শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজির ভাগ কারা পান তা জানেন জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘সময় হলে’ সব জানাবেন তিনি।

সাত খুনে র‌্যাব কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, নজরুলের পরিবারের সূত্র ধরেই তিনি বলেছিলেন যে নূর হোসেন টাকা দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

ফাইল ছবি

হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে প্রশাসনকে চাপ দেয়ার পক্ষপাতি নন এই সংসদ সদস্য।

র‌্যাবকে দায়ী করে বিএনপি চেয়ারপারসন জিয়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “তার মতো দায়িত্বশীল নেত্রী যদি এ ঘটনায় সরাসরি র‌্যাবের ওপর দায় চাপান তাহলে তদন্ত কর্মকর্তারা বিব্রত হন।

“আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিব্রত করে কেউ কোনো অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে।”

আইনশৃঙ্খলা সভার পর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সভায় পুলিশ সুপার, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে খুনিদের গ্রেপ্তারের অনুরোধ করা হয়েছে।

সভায় আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল্লাহ শহরের চাষাঢ়ার যানজট নিরসনে সেখানে থাকা একটি পরিবহন কোম্পানির কাউন্টার তুলে দিতে বলেন।

ওই কাউন্টারের কারণে সেখানে পরিবহনটির বেশ কিছু বাস দাঁড়িয়ে থাকায় শহরময় যানজট ছড়িয়ে পড়ছে, বলেন তিনি।

সভায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হোসেনে আরা বাবলী, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, রূপগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

সিদ্ধিরগঞ্জে যুবলীগ নেতার বাড়িতে তল্লাশি

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান ওরফে সুন্দর মতির বাড়িতে বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

দুপুর ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা গোদনাইল আইলপাড়া এলাকার ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছে সিআইডির সহকারী সুপার এহসানউদ্দিন চৌধুরী।

সাত খুনের তদন্তের অংশ হিসেবে এই অভিযান চালানো হয় বলে সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সাত খুনের তদন্ত গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) করলেও হাই কোর্ট সিআইডিকেও তদন্ত করতে বলেছে।

এহসানউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্তের অংশ হিসেবে মতির বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। তবে তাকে পাওয়া যায়নি।”

মতি সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনের পক্ষে আদমজী ইপিজেডের গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নজরুলের পরিবারের অভিযোগ, এই কাউন্সিলর খুন হওয়ার কিছু দিন আগে তার অনুসারীদের ঝুটভর্তি চারটি ট্রাক ছিনতাই হয়।

অভিযানের পর মতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।