ক্ষমা চাইলে জামায়াত নিষিদ্ধ নয়?

একাত্তরে ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ক্ষমা চাইলে তাদের নিষিদ্ধ না করার পক্ষে নিজের মত জানিয়েছেন শেখ হাসিনা সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2014, 05:10 PM
Updated : 29 March 2014, 06:32 PM

যুদ্ধাপরাধের বিচারে দল হিসেবে জামায়াতের অপরাধীর ভূমিকা রায়ে উঠে আসার পর একে নিষিদ্ধের সুপারিশ জানিয়ে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার মধ্যে মন্ত্রীর এই মত জানা গেল।

শনিবার বিবিসির সংলাপে আনিসুল ইসলাম বলেন, “জামায়াত যদি তাদের ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, যদি তারা বলে যে সহিংসতা করবে না, তাহলে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করাটাই ‘বেটার’।”

তবে এনিয়ে আরো আলোচনা করতে হবে, বলেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এই সদস্য।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা ‘ক্রিমিনাল দল’ জামায়াত একাত্তরে তাদের ভূমিকার জন্য কখনো ক্ষমা চায়নি। গোলাম আযমসহ দলটির শীর্ষনেতাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় পর্যবেক্ষণে এই কথা বলা হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জোরালোভাবে উঠেছে। বামপন্থি দলগুলো মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দলটি নিষিদ্ধের দাবি আগে থেকে জানিয়ে আসছিল।

জামায়াত নিষিদ্ধে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দলটির নিবন্ধন বাতিল নিয়ে আদালতে যে মামলা চলছে, তা নিষ্পত্তি হলেই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে সরকার।

বিবিসির সংলাপে আনিসুল ইসলামের সঙ্গে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম জামায়াত নিষিদ্ধে আওয়ামী লীগের আন্তরিকতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের এমপি-নেতারা জামায়াতের লোকজনকে দলে টেনে নিচ্ছে। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ আপস করতে চাইলে হয়ত জামায়াত নিষিদ্ধ হবে না।”

জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিত হবে কি না- অনুষ্ঠান সঞ্চালকের এই প্রশ্নের জামায়াতের জোটসঙ্গী বিএনপির এই নেতা বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি মনে করি, স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী প্রত্যেকেরই ক্ষমা চাওয়া উচিত।”

তিস্তা প্রসঙ্গ

সংলাপে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল বলেন, ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

“ভারতে নির্বাচনের সময়ে তিস্তা সম্পর্কে কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পরবর্তী নতুন সরকারের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে ফলপ্রসূ করতে হবে।”

তিন বছর আগে মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা আটকে যায়।

আনিসুল বলেন, “আলোচনার যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সেখান থেকেই শুরু করব। আমাদের আলোচনা মমতার সঙ্গে নয়, দিল্লির সঙ্গে।”

তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে জাতিসংঘে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিলেও আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধানে নিজের অবস্থান জানান নজরুল ইসলাম।

সংলাপে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানি আদায় না হলে আর কেউ পারবে না। আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়ার আগে এ বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করতে হবে।”