‘আরে ব্যাটা, জিয়া বেতন পেত দেড়শ টাকা’

জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করায় তারেক রহমানকে মুজিবনগর  সরকারের অধীনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার বাবার কাজ করার ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2014, 04:52 PM
Updated : 27 March 2014, 05:30 PM

বৃহস্পতিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে তোফায়েলের পাশাপাশি অন্য নেতারাও তারেকের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।

“পাগল-ছাগল নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই,” তারেককে ইঙ্গিত করে এই কথাও বলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

জিয়া ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক বুধবার লন্ডনে বিএনপির এক সভায় বক্তব্যে দাবি করেন, জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

ওই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে তুমুল আলোচনার মধ্যেই খালেদা বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে একই দাবি করেন।

ঢাকায় খালেদার অনুষ্ঠানের ঘণ্টাখানেক আগে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা হয়, যাতে তীব্র ভাষায় তারেকের সমালোচনা করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

বিভিন্ন মামলার আসামি তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করার দাবিও জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত বলেন, “আরে ব্যাটা, প্রক্লেমেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্সের নাম শুনছ? মুক্তিযুদ্ধ একটা সরকারের অধীনে হয়েছে, সে সরকারের প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

“আর, সে সরকারের অধীনে জিয়া ছিল একজন সেক্টর কমান্ডার। আমরাও দেড়শ টাকা বেতন পেতাম, সেও পেত দেড়শ টাকা।”

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকের কথা তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “জিয়া ছিলেন ষোলশহরে। যারা পাকিস্তানে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তারাই ষোলশহরে ছিল। সোয়াত জাহাজ থেকে দু’দিন আগে অস্ত্র খালাস করতে পারলে তারা চলে যেত।”

স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি ২৭ তারিখ সকালে হান্নান সাহেবের কণ্ঠ শুনি। ২৭ তারিখ বিকাল ৪টায় প্রথম জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনি।”

চট্টগ্রামের নেতা গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “২৬ তারিখ ২টা ১৫ মিনিটে সর্বপ্রথম এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।”

আমির হোসেন আমু বলেন, “বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানিরা বাঙালি অফিসারদের হত্যা করেছিল বলেই জিয়ার মতো অনেকে বাধ্য হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।”

তারেককে ইঙ্গিত করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “যে নাকি পাকিস্তানি ব্যাটম্যানদের কোলে পিঠে মানুষ হয়েছে, সে এখন অনেক কথা বলে।”

আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূইয়া বলেন, তারেক রহমান ‘প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া’ রোগে ভুগছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক অবিলম্বে তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।

তারেককে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন বলেন, “মুরোদ থাকলে দেশে আস, আদালতে দাঁড়াও। দেখি কেমন বাপের বেটা তুমি।”

আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, “অবিলম্বে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। তাকে দেশে ফিরিয়ে আদালতে সোপার্দ করা হোক।”

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নাম উল্লেখ না করে তারেকের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, “বিদেশে থাকলে তো একটু পড়াশোনা করার কথা। কিন্তু, সেইটুকু পড়াশোনা করেছে কি না, জানি না। কিছু অর্বাচীন উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য।”

“মিথ্যাচার, অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে যাদের জন্ম, তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। যাদের অবৈধ জন্ম- তারা তো অসংলগ্ন কথা বলবেই।”