রাজনীতিতে বিতৃষ্ণা রওশনের

স্বামী ও দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব থাকার কথা অস্বীকার করলেও আগামীতে নির্বাচন আর  না করার ঘোষণা দিয়েছেন রওশন এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2014, 10:40 AM
Updated : 27 March 2014, 11:10 AM

নানা নাটকীয়তার মধ্যে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর বিএনপিবিহীন দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়া রওশন বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে এরশাদকে পাশে রেখে এই ঘোষণা দেন।

জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “অনেক রাজনীতি করেছি, আর করব না।”

দশম সংসদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাও ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির’ কারণে তাকে ভোটের লড়াইয়ে আসতে হয়েছিল।

”আমি চাইনি। এরপরও বাধ্য হয়ে আমাকে এটা (নির্বাচন) করতে হল। যাই হোক, আমি ভবিষ্যতে আর ইলেকশন করব না, রাজনীতিও করব না।”

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ছাত্রসমাজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন।

মঞ্চে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এরশাদের পাশের আসনেই বসেন তিনি। রওশন বলেন, বাইরে আলোচনা হলেও তার সঙ্গে দলের চেয়ারম্যানের কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

গত শতকের  ’৮০ এর দশকে সেনাপ্রধান এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হলে ফার্স্টলেডি পরিচয় নিয়ে থাকলেও রাজনীতিতে তৎপর হতে দেখা যায়নি রওশনকে। 

গণঅভ্যূত্থানে এরশাদ ক্ষমতা হারিয়ে কারাবন্দি হলে ভোটের লড়াইয়ে নামেন রওশন, জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব নেন। এরশাদ বন্দি থাকা অবস্থায় দলকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে তাকেই।

এরশাদ কারাগার থেকে বেরিয়ে দলের কর্তৃত্ব নিলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে রাখেন রওশন, তবে সংসদ নির্বাচনে নিয়মিতই অংশ নিচ্ছিলেন।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রে আসেন রওশন। বিএনপির বর্জনের প্রেক্ষাপটে কয়েকবার সিদ্ধান্ত বদলে এরশাদও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হন।

অন্যদিকে রওশনের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি, ভোটের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন তিনি। পুরো ঘটনা এরশাদের অনুপস্থিতিতে ঘটলেও রওশন বলেছিলেন, এরশাদের সম্মতিতেই সব হয়েছে।

এরশাদ নিজেও এরপর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন, হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও। তবে ভোটের সময়ের অনুপস্থিতির রহস্য এখনো তিনি ভাঙেননি। শুধু বলেছেন, ‘সময়’ হলে সব বলবেন।

ভোটের পর দলের কোনো কর্মসূচিতে এরশাদ-রওশনকে একসঙ্গে দেখা না যাওয়ায় আলোচনা রয়েছে যে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।

এর মধ্যেই ছাত্র সমাজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সম্মেলনের অনুষ্ঠানে এক হলেন তারা। বেলা ১১টায় উপস্থিত হন এরশাদ, আধ ঘণ্টা পর রওশন উপস্থিত হয়ে এরশাদের পাশের আসনে বসেন। এই সময় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনা পান তিনি।

ছাত্রসমাজের সম্মেলনে এইচ এম এরশাদ, তখনো রওশন এরশাদ উপস্থিত হননি। উপস্থিত হওয়ার পর এরশাদের বাম পাশের আসনে বসেন রওশন।

দলের অনুষ্ঠানে এই দম্পতিকে সর্বশেষ কবে একসঙ্গে দেখা গেছে- জানতে চাইলে  এরশাদের রাজনৈতিক ও প্রেসসচিব এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভরায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“ঠিক স্মরণ করতে পারছি না।”

এরশাদ তার বারিধারার বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে থাকেন, রওশন থাকেন গুলশানে আরেকটি বাড়িতে। 

এক মঞ্চে পাশাপাশি বসলেও দীর্ঘ সময় তাদের কথা বলতে দেখা যায়নি। এরশাদ কথা বলছিলেন তার ডানপাশে বসা দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে, আর রওশন কথা বলছিলেন তার ডান পাশের আসনে থাকা দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সল চিশতির সঙ্গে।

অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলে এরশাদকে উদ্যোগী হয়ে রওশনের দিকে খানিকটা ঝুঁকে কথা বলতে দেখা যায়।

দ্বন্দ্বের খবর অস্বীকার করে রওশন বলেন,“আমাদের মধ্যে তো কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যখন তিনি (এরশাদ) জেলে ছিলেন, তখন আমি মাঠে-ঘাটে-শহরে-বন্দরে তার মুক্তির দাবিতে ঘুরে বেড়িয়েছি। তার জন্য অনশন করেছি।

“পাঁচ-ছয় বছর একা দল চালিয়েছি। তখন পার্টির অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আমাকে বলেছিলেন, আমি যেন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেই। আমি বলেছিলাম, তা হবে না।”

“তখনি দায়িত্ব নিইনি, এখন কেন নেব? এই পার্টিকে ধরে রাখার জন্য আমি শ্রম দিয়েছি। আমি পার্টিকে নষ্ট করব কেন? পার্টির চেয়ারম্যানকে বাদ দেয়া কিংবা পার্টি ভাঙার তো প্রশ্নই আসে না। এ নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই।”

রওশনের বক্তব্য সমর্থন করে এরশাদও বলেন, “তিনি যা বলেছেন, তা- ই সঠিক। আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। জাতীয় পার্টি এক এবং অদ্বিতীয়।”