নির্বাচনে হাসিনা খরচ করেন ১০ লাখ টাকা

দশম সংসদ নির্বাচনে দুই আসনে ১০ লাখ টাকা খরচ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2014, 05:39 PM
Updated : 7 Feb 2014, 04:44 AM

৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গীপাড়া-কোটালীপাড়া) ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে তার ৩৭ লাখ টাকা খরচের সুযোগ ছিল।

ভোট শেষে হিসাব জমার নির্ধারিত সময়ের একদিন আগে বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মোহাম্মদ সাদিকের কাছে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার হিসাব বিবরণী জমা দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এই হিসাব দাখিল করেন। তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সেলিনা খাতুন ও সাবেক সাংসদ ফজিলাতুন নেসা বাপ্পীও ছিলেন।   

প্রতিনিধি দলের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রংপুর-৬ আসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০ টাকা। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।”

বুধবার সংসদে শেখ হাসিনা

প্রার্থীদের এবার সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা ছিল ২৫ লাখ টাকা। ভোটার প্রতি ৮ টাকা হারে ব্যয়ের সুযোগ ছিল।

সেই হিসাবে, রংপুর-৬ আসনের ২ লাখ ৬২ হাজারের বেশি ভোটারের জন্য প্রায় ২১ লাখ টাকা এবং গোপালগঞ্জ-৩ আসনের ২ লাখ ১১ হাজারের বেশি ভোটারের জন্য প্রায় ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করার সুযোগ ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর।

টানা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া হাসিনা নবম সংসদেও রংপুর-৬ আসনে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছিলেন। তখন প্রার্থী সর্বোচ ব্যয় ১৫ লাখ বা ভোটার প্রতি ব্যয় ছিল সর্বোচ্চ ৫ টাকা করে।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও হিসাব দিতে হবে

ভোটের মাঠে প্রচারণায় না থাকলেও দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদেরও ব্যয়ের হিসাব বিবরণী জমা দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন।

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসি সচিবালয়ে তা পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

দশম সংসদে রেকর্ড সংখ্যক ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৫৪৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ইসির উপসচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, “বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ব্যয় রিটার্ন দেয়ার বিষয়টি তার জন্য প্রযোজ্য হবে না মনে করছেন অনেকে।

“এমন সংশয়ের অবসান ঘটাতে আইনানুগভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতসহ সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে রিটার্ন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”

মিহির জানান, নির্বাচনে জয়ী, পরাজিতসহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতসহ ১২টি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে ৫৪৩ জনকেই হিসাব দিতে হবে।  

“কারণ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণার আগে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত নির্বাচনী ব্যয় করেছিলেন তারা,” বলেন তিনি।

হিসাব না দিলে প্রার্থীদের আইন অনুযায়ী দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

তিন মাসের মধ্যে দলকে দিতে হবে

আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ১২টি রাজনৈতিক দলকে দলীয় নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে দাখিল করতে হবে বলে জানান ইসির উপসচিব মিহির সারওয়ার।

তবে বিলম্বে যেসব প্রার্থীর গেজেট হয়েছে তাদের ওই সময়ের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দিতে হবে। সর্বশেষ স্পিকারও উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে এসেছেন।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধী জোটের অনুপস্থিতিতে ১২টি দল দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়।

এবার প্রার্থী হন ৫৪৩ জন। এর মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোটের লড়াইয়ে থাকে ৩৯০ জন, এর মধ্যে ১০৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

১৪৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১২০ জন, জাতীয় পার্টির ৬৬ জন, জেপির ২৭ জন, বিএনএফের ২২ জন, জাসদের ২১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ১৬ জন।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ১২৭ জনই আওয়ামী লীগের, ২০ জন জাতীয় পার্টির,৩ জন জাসদের, ২ জন ওয়ার্কার্স পার্টির এবং ১ জন জেপির।

অংশ নেয়া বাকি দলের মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, গণফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট রয়েছে।