শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাড়ি ফিরলেন এরশাদ

বঙ্গভবনে শেখ হাসিনার নতুন সরকারের শপথের সাক্ষী হয়ে বাড়ি ফিরেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2014, 02:56 PM
Updated : 12 Jan 2014, 03:20 PM

প্রায় এক মাস আগে র‌্যাব পাহারায় বারিধারার বাড়ি থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

রোববার সন্ধ্যায় এরশাদ যখন বাড়ি ফেরেন তখনো পুলিশ পাহারা ছিল তার সঙ্গে। তবে এবার তা নিয়ম অনুযায়ীই, কারণ নতুন সরকার গঠন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে বিশেষ দূত করেছেন হাসিনা।

এরশাদ সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে প্রেসিডেন্ট পার্কে ফেরেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রচার সম্পাদক জাহিদ হোসেন বিপ্লব।

গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুর এ আজম মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিশেষ দূত হওয়ায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে সেই ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে।

গত ১২ ডিসেম্বর সিএমএইচে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের গুঞ্জনের মধ্যে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এরশাদ শনিবার রাখঢাকের মধ্যে সংসদ ভবনে গিয়ে শপথ নেন।

শপথ নিয়ে আবার সিএমএইচে ফিরে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। সেখান থেকে বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। বঙ্গভবন থেকে সিএমএইচে ফিরে কিছুক্ষণ থেকে বাড়িতে ফেরেন তিনি।

বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে এরশাদের উপস্থিতি ছিল সবার কাছে এক ধরনের চমক। অনুষ্ঠান শুরুর ৫ মিনিট আগে তিনি দরবার হলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত প্রায় সবাই হাততালি দিয়ে ওঠেন, কাউকে কাউকে উচ্চ স্বরে হেসে উঠতেও দেখা যায়।

এরশাদ সামনের সারিতে বসা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ অনেকের সঙ্গে হাসতে হাসতে কুশল বিনিময় করে বসেন স্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পাশে।

প্রথম দিকে বেশ কিছুক্ষণ রওশনের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। পরে কথা হয় দু’জনের মধ্যে, তবে দু’জন পরস্পরের দিকে না তাকিয়েই কথা বলেন।

এসময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হওলাদার এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নতুন সরকারের প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু দেখা করতে যান দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে।

শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবভবনের লনে চা চক্রে যোগ দেন এরশাদ। এসময় মহাসচিব হাওলাদার তার পাশেই ছিলেন। বঙ্গভবনে অবস্থানের প্রায় পুরো সময়টাই এরশাদের পাশে ছিলেন তিনি।

চা চক্রে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচনকালীন সরকারের প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলামকে দেখে এরশাদ বেশ উৎফুল্ল হয়ে তার হাত ধরে বলেন, “অ্যাই, তুমি কেমন আছ?”

সালমার সঙ্গে কথা বলার সময় বেশ কয়েকজন এরশাদের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। শেখ হাসিনার নতুন সরকারে এরশাদের দলের তিনজন স্থান পেয়েছেন।

ফাইল ছবি

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য বঙ্গভবনের লনের একপাশে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়, এরশাদ যান সেখানেই। নিরাপত্তা রক্ষীরা সেদিকে সাংবাদিকদের ভিড়তে না দেয়ায় ঘটনা দেখলেও এরশাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি কারো।

গত ১২ ডিসেম্বর হাসপাতালে যাওয়ার পর থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কোনো বক্তব্য সরাসরি পাননি সাংবাদিকরা। তার আগে তিনি সর্বশেষ বলেছিলেন, বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে তার দল অংশ নিচ্ছে না।

বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘ধোঁয়াশাময় চরিত্র’ হিসাবে পরিচিত এরশাদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করলেও আইনের মারপ্যাঁচে তা গৃহিত না হওয়ায় রংপুর-৩ আসন থেকে ভোটে জিতে যান এরশাদ।

এর মধ্যে বাহকের মাধ্যমে তিনি বার্তা পাঠান যে তাকে হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছে। তবে এসব বিষয় নিয়ে তার দলের নেতাদের কাছ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়।

ওই সময়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যাওয়া রওশনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচনে আসছে বলেও গুঞ্জন ছড়ায়। তবে পুরো সময়েটাতে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান এরশাদের স্ত্রী।  

তবে গত ৯ জানুয়ারি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে রওশন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এরশাদের সম্মতিতে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং তার সম্মতিতেই বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন তিনি।