এরশাদের ‘দোয়া’ নিয়ে বিরোধী নেত্রী রওশন

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ‘সম্মতিতে’ দশম সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হতে যাচ্ছেন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2014, 12:15 PM
Updated : 9 Jan 2014, 12:53 PM

নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশের পর সংসদে শপথ অনুষ্ঠানের তোড়জোড়ের মধ্যে বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে দলের এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়।

দলীয় নেতাদের পাশে রেখে ওই সংবাদ সম্মেলনে রওশন বলেন, “আমাদের দলের চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তাই বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।

“তিনি (এরশাদ) বলেছেন, ‘তুমিই বিরোধীদলীয় নেতা হও। আমার দোয়া তোমার সঙ্গে থাকবে’।”

নির্বাচনের আগে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব ছাড়ার গুঞ্জনের মধ্যে এরশাদ বলেছিলেন, “রওশন আমার স্ত্রী। সে আমার মতের বাইরে যায়নি, যাবেও না।”

তবে নানা নাটকীয়তার মধ্যে দেশবাসীকে বিভ্রান্তিতে রেখে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৩টি আসনে জয় পায় জাতীয় পার্টি, যার একটিতে বিজয়ী হন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে হাসপাতালে থাকা এরশাদও।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই রওশন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আমি জানি, আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানতে চান, কেন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে গেল?

“আমাদের উত্তর হচ্ছে, দেশ একটি ক্রান্তিলগ্ন পার করছিল। সন্ত্রাস-অবরোধ-জ্বালাও-পোড়াওসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্রের ধারা রক্ষার জন্যই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।”

নির্বাচন নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলা রওশন বলেন, “আমাদের অনেক ‍দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু পার্টির প্রেসিডিয়াম কমিটিতে বিস্তর আলোচনা করে দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা রক্ষা করতেই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। নইলে দেশে অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ঘটতে পারত, যা কারোরই কাম্য নয়।”

তবে সঙ্কটের সমাধান এখনো হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, “দেশের সার্বিক কল্যাণ, স্থিতিশীলতার জন্য বড় দুটি দলের আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আমরা দুই দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাব, যেন আলোচনায় বসে একটি সমঝোতায় পৌঁছান।”

ভোটে জয়ীদের সঙ্গে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী রওশনসহ ২০ জনকে নিয়ে বিএনপিবিহীন দশম সংসদে ৩৩ আসন হচ্ছে জাতীয় পার্টির। ফলে আওয়ামী লীগের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে তারা।

শপথের আগের দিন সংসদ ভবনে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে এরশাদও শপথ নেবেন।

“আমাদের দলের চেয়ারম্যানও আগামীকাল অথবা যে কোনো দিন শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।”

সিএমএইচে এরশাদ এখন কেমন আছেন, কী করছেন- জানতে চাইলে তার স্ত্রী রওশন বলেন,“চেয়ারম্যান আমাদের সাথেই আছেন। তিনি আমাদের উৎসাহ দিচ্ছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন; কিন্তু শরীর খারাপের কারণে হাসপাতালে আছেন।

“উনার ওপর অনেক স্ট্রেস গেছে। এখন তিনি কিছুটা সুস্থ। কিছুদিনের মধ্যেই ডাক্তার তাকে ছেড়ে দেবেন।”
 

বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা রওশনের নেতৃত্বে অংশ নেবেন বলে জানান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

সংবাদ সম্মেলনে রওশনের সঙ্গে আরো ছিলেন জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও সালমা ইসলাম।

এরশাদের ভাই, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জি এম কাদের সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না। তবে রওশন বলেন, “তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন।”

৫ জানুয়ারির ভোটে এরশাদ একটি আসনে জিতলেও শোচনীয়ভাবে হারেন নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী কাদের। তবে  এরশাদ বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর তার পক্ষে লালমনিরহাটের ওই আসনে কোনো প্রচার ছিল না।