‘একতরফা’ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সারাদেশে সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
Published : 05 Jan 2014, 04:59 PM
দশম সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে রোববার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক।
জনগণ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করে তিনি বিরোধী জোটের দাবি মেনে নির্দলীয় সরকার গঠন করে তাদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানান।
বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যে রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতায় সারাদেশে ২১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও একজন আনসার সদস্যও রয়েছেন।
ভোট প্রতিহত করতে ১৮ দলের আহ্বান সত্ত্বেও নির্বাচন যথাযথভাবে হয়েছে দাবি করে এনিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বলছে, গণতন্ত্র ‘রক্ষার’ এই নির্বাচনে জনগণের সাড়া মিলেছে।
গুলশানে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে ওসমান ফারুক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা জনগণকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, আজ জনগণ তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি, ভোটও পড়েনি।
“দেশের মানুষ এর মাধ্যমে সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে। সরকার বলেছে, শৈত্য প্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত ভোটার আসতে পানেনি। আমরা বলতে চাই, ভোটারবিহীন নির্বাচনে এই মৃত সরকারকে জনগণ হিমাঘারে পাঠিয়ে দিয়েছে।”
ভোটের হারের বিষয়ে ওসমান ফারুক বলেন, “গণমাধ্যমের তথ্যচিত্র এবং সারাদেশে আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেছি, গড়ে তিন থেকে পাঁচ শতাংশের বেশি ভোটার যায়নি। যদি এই ভোটের হারে সরকার মনে করে জনগণ তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে, তা হলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করবে।”
নির্বাচন কমিশন ৬২ শতাংশ ভোট গ্রহণের যে দাবি করেছে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি পুতুল। ওই কমিশনের এই ফলাফল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
“এই রকম একটি নির্বাচনের জন্য মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ করা উচিৎ।”
ওসমান ফারুক বলেন, “আমরা প্রহসনের এই নির্বাচনের ফলাফল মানি না। এই নির্বাচনের ফলাফল অবিলম্বে বাতিল করে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।”
সোমবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত হরতালের সঙ্গে ১ জানুয়ারি থেকে চলমান অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে জানান ওসমান ফারুক।
তিনি বলেন, “বিরোধী দলের ডাকে ভোট বর্জনের করার মাধ্যমে জনগণ সরকারের বাকশালী আচরণের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে। এই প্রহসনের নির্বাচন দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করায় সরকার সম্পূর্ণভাবে অবৈধ হয়ে গেছে।
“এই সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গুণ্ডাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে তারা টিকে আছে।”
নির্বাচনের সময়ে সারাদেশে বিরোধী জোটের ২১ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে ওসমান ফারুক বলেন, নির্বাচনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখতে গিয়ে যৌথবাহিনীর আক্রমণের শিকার হন তারা।
বিএনপি নেতা সরকারের উদ্দেশে বলেন, “প্রহসনের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে সংলাপে বসুন। আপনারা পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। জাতিকে সংঘাত ও অনিশ্চয়তার অন্ধকার থেকে শান্তির পথে আসতে সহায়তা করুন।”
সংবাদ সম্মেলনে ওসমান ফারুকের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহিন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।
‘নীলনকশার নির্বাচন ব্যর্থ হয়েছে’
সরকারের ‘নীলনকশার’ নির্বাচন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ভোটাররা এই তামাশার নির্বাচনকে শুধু প্রত্যাখ্যানই করেনি, বরং সরকারের একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। এই নীল নকশার নির্বাচন ব্যর্থ হওয়াতে সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো নৈতিক অধিকার নেই।”
অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবিও জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “ভোটারবিহীন ও প্রহসনের এই নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছে। অবশিষ্ট ১৪৭ আসনের সাজানো নির্বাচন এখন সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে পড়েছে। জনগণ ঘৃণাভরে এই নির্বাচন সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
“এমন অসংখ্য কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে ভোট প্রদানের সংখ্যা শূন্য। কোথাও কোথাও ১- ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।”
“সরকারের আজ্ঞাবহ বশংবদ নির্বাচন কমিশন এবং সাজানো প্রশাসন দিয়েও সরকার এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে পারেনি।”