বিরোধী দল অংশ না নিলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘যথাযথ’ হয়েছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
Published : 05 Jan 2014, 04:03 PM
রোববার বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, “সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, সব ষড়যন্ত্র বানচাল করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“নির্বাচন যথাযথভাবে হয়েছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিজয় হয়েছে।”
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল ভোট বর্জনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। হরতাল ডেকে নির্বাচন প্রতিহত করার হুমকিও ছিল তাদের।
তোফায়েল বলেন, “জনগণ তার (খালেদা জিয়া) আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। প্রতিবন্ধকতা, নাশকতা সত্বেও টার্নআউট সন্তোষজনকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।”
নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি অনেক চেষ্টা চালিয়েও সফল হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘এই নির্বাচনের বিকল্প আর কিছু ছিল না’ দাবি করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, “নির্বাচন না করতে পারলে শূন্যতার সৃষ্টি হতো। দেশ কোথায় চলে যেত...।”
এই নির্বাচনে বিরোধী দলের অনুপস্থিত থাকলেও আওয়ামী লীগ সবার অংশগ্রহণেই নির্বাচন চেয়েছিল বলে দাবি করেন তোফায়েল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন তৎপরতাও তুলে ধরেন তিনি।
“খালেদা জিয়া সহিংসতার পথ বেছে নেন। তিনি গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এর সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা নেই। এভাবে গণঅভ্যুত্থান হয় না।”
বিরোধী দলবিহীন এই নির্বাচনে ১৫৩ আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ১৪৭ আসনে ভোট হয়েছে রোববার।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তোফায়েলের সঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন করতে পারাই রাজনৈতিক সফলতা
এদিকে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে দক্ষতার সঙ্গে দশম সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে জানিয়ে এটাকে রাজনৈতিক সফলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন নির্বাচনকালীন সরকারের তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে ভোটের ফল পরিবেশন পরিদর্শনে এসে একথা বলেন তিনি।
সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগরে কমিশনের কার্যালয়ে তিনি বলেন, “এ নির্বাচন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় বজায় রেখেছে। নির্বাচন দেশকে রক্ষা করেছে।”
বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের মুখে রোববার হরতাল-অবরোধ, বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নশকতা-হামলার মধ্য দিয়ে ভোট শেষ হয়।
ইনু বলেন, “বিএনপি-জামায়াত দেশকে সংবিধানের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্তে ছিল। কিন্তু এ নির্বাচনে সংবিধান রক্ষা হলো, দেশ রক্ষা হলো। সংঘাত পরিস্থিতিতে দক্ষতার সঙ্গে ভোট করাই একটি রাজনৈতিক সফলতা।”
প্রশাসনিকভাবে দক্ষতার সঙ্গে ভোট করতে পারায় সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদকে ধন্যবাদ জানান তথ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, “নতুন সরকার, নতুন সংসদ এসে নাশকতা, সন্ত্রাস থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিরোধী দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা গণতন্ত্রের পথে থাকবে কিনা; সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করবে কিনা।”
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের তিন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। আর নির্বাচনে লড়ছে দলের ২১ প্রার্থী।
‘গণতন্ত্রের বিজয়’
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, “এই নির্বাচন গণতন্ত্রের বিজয়। এই নির্বাচন জনগণের বিজয়।”
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “বিরোধী দল অংশ নিলে আরো ভালো হত।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমাম স্বীকার করেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় গত নির্বাচনের তুলনায় ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম।
“দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব আজকের নির্বাচন তার প্রমাণ। অনেক জায়গায় সহিংসতা হয়েছে, অনেক জায়গায় সহিংহতার চেষ্টা হয়েছে।”
“যারা সকল ভয়-ভীতিকে পাশ কাটিয়ে ভোট দিতে এসেছেন এবং যারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে ভোট উৎসবকে সফল করে তুলেছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”
বিএনপির ডাকে মানুষ সাড়া না দিয়ে নির্বাচনকে ‘সফল’ করে তুলেছে বলেও দাবি করেন ইমাম।