চেয়ারম্যান আমিই আছি: এরশাদ

পদত্যাগের গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ; নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তেও অটল থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি।

রিয়াজুল বাশারও আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2013, 08:55 AM
Updated : 7 Dec 2013, 12:16 PM

নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলের পর জাতীয় পার্টিতে টানাপড়েনের খবরের মধ্যে শুক্রবার রাত থেকে গুঞ্জন চলছিল, এরশাদ পদত্যাগ করেছেন এবং জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির বহিষ্কৃত নেতা কাজী জাফর আহমেদও বলেন, তিনি ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ খবর পেয়েছেন যে এরশাদ পদত্যাগ করেছেন।

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এরশাদ তার বারিধারার বাড়িতে সাংবাদিকদের সামনে এসে বলেন, “আমি এইচ এম এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আছি, থাকব। আমি চেয়ারম্যান, আমি এখনো জীবিত, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই।

“রওশন এরশাদ আমার কাছ থেকে ক্ষমতা নেননি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হননি।”

পদত্যাগ নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ না ছড়াতেও সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক এই সামরিক শাসক। 

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আশা করলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়ে এরশাদ বলেন, তফসিল ১০ দিন পিছিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে তাতে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না।

গত মঙ্গলবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এরশাদ। পরদিন নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার এরশাদ তার দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র নিজের কাছে জমা নেন। শনিবার দুপুরে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সবাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে গেছেন।

এর মধ্যে কয়েকজন পদত্যাগপত্র দেননি বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। কাজী জাফর বলেছেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু পদত্যাগ করতে রাজি হচ্ছেন না।

সবার পদত্যাগপত্র পাওয়ার দাবি করলেও এই বিষয়টি তুলে ধরার পর এরশাদ বলেন, “পদত্যাগ করুক, আর না করুক, সব দল অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে না।”

নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে রয়েছেন রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, মুজিবুল হক চুন্নু ও সালমা ইসলাম,।

তবে তাদের কেউই শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেননি।

এরশাদের ঘোষণার পর গুলশানে রওশনের বাড়িতে বৈঠক করেন আনিসুল ইসলাম, জিয়াউদ্দিন বাবলু, সালমা ইসলাম ও মুজিবুল হক চুন্নু। চুন্নু পরে হাওলাদারের বাড়িতে আরেকটি বৈঠকে জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগ দেন। কাদেরর গাড়িতে এই সময় জাতীয় পতাকা দেখা যায়।

হাওলাদারের বাড়িতে ঢোকার সময় চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি এখনো পদত্যাগপত্র দেননি।

“আজ তো বন্ধ (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) হয়ে গেছে। দেখি কাল দেবো।”

অন্যরা জমা দিচ্ছেন কি না- জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, “আমি শুধু আমার খবর জানি। অন্যদের খবর আমার কাছে নেই।”

অন্যদিকে হাওলাদারকে নিয়ে বিকালে এরশাদের বাড়িতে ঢোকার সময় জাপা চেয়ারম্যানের ভাই কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দলের চেয়ারম্যানের কাছে আমাদের পদত্যাগপত্র দিয়েছি, তিনি যা ভালো মনে করেন করবেন।”

মহাসচিব হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, রোববার কোনো এক সময় পদত্যাগপত্র জমা দেয়া হবে।

“জাতিসংঘের একজন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করছেন, অন্যদিকে ছুটির দিন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাওয়া না যাওয়ায় আজ পদত্যাগপত্র দেয়া সম্ভব হয়নি।”

এরশাদ বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, তিনি শনিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্রগুলো দিয়ে আসবেন।

তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হননি তিনি। নাটকীয়ভাবে সিদ্ধান্ত বদলের পর বুধবার তার বাড়ির সামনে র‌্যাব-পুলিশের পাহারা বসে। এর মধ্যেই ওই বাড়িতে দলের নেতা-কর্মীরাও ভিড় জমিয়ে আছে।