নির্বাচনে যাব না: এরশাদ

সব দল না আসায় এবং ‘পরিবেশ না থাকায়’ জাতীয় পার্টি দশম সংসদ নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2013, 06:17 AM
Updated : 3 Dec 2013, 01:56 PM

মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পরদিন মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এই ঘোষণা দেন।

এরশাদ বলেন, “আমি বলেছিলাম, সব দল নির্বাচনে না গেলে আমিও যাব না। আমি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছি। সব দল আসেনি, জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে যাবে না।”

জাতীয় পার্টির যেসব সদস্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের তা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন দলের চেয়ারম্যান।

গত ১৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পর ২৯৯ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় জাতীয় পার্টি। 

৫ জানুয়ারি ভোটে দিন রেখে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। এদিন এরশাদের পক্ষে ঢাকা-১৭, লালমনিরহাট-১ ও রংপুর-৩ আসনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়।

অন্য সময় দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে রাখলেও এবার একা সংবাদ সম্মেলনে আসা এরশাদ বলেন, “আমি নিজে আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি। জাতীয় পার্টির যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাদেরও নির্দেশ দিয়েছি- মনোনয়নপত্র তুলে নাও।”

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৩০০ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় পার্টি (জেপি), জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৫টি দলের ১১শ’র কিছু বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

তবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা বিএনপি ও তাদের প্রধান শরিকরা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ঘন ঘন নিজের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য আলোচিত-সমালোচিত সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ গত ২৯ নভেম্বর এক দলীয় কর্মসূচিতে বলেছিলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল, আসন্ন নির্বাচনের জন্য জাতীয় পার্টি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে নির্বাচনের ‘সুষ্ঠু পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়নি।

সেই কথার সূত্র ধরে মঙ্গলবার তিনি বলেন, “মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। সব দল মনোনয়ন দাখিল করেনি। তাই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। মানুষ মরছে, গাড়ি পুড়ছে।”

সাবেক এই সেনা শাসক খেদের সুরে সাংবাদিকদের বলেন, “তোমরা সবসময় বলো, আমি কথা ঠিক রাখি না। সকালে এক কথা বলি, বিকেলে আরেক কথা বলি। এটা কিছুটা হলেও সত্য। কিন্তু আমার অবস্থা তোমরা বুঝতে চাও না। আমার দুঃখের কথা তোমরা শুনতে চাও না।”

ঊনিশশ নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী গণ আন্দোলনে উৎখাত হওয়ার পরের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে এরশাদ বলেন, “আমাকে বন্দি করা হয়েছিল। অনেক অবিচার, অপমান, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে রাজনীতি করছি। ১৯৯০ সাল থেকে মুক্তভাবে রাজনীতি করতে পারিনি। আমার নামে ৭৪টি মামলা দেয়া হয়েছে। গত বাইশ বছরে আওয়ামী লীগ এসেছে, বিএনপি এসেছে…আমার মামলাগুলোর কোনো সুরাহা হয়নি।”

তিনি বলেন, কারাগারে থাকার সময় একবার ইফতারে মিষ্টি চেয়েও পাননি। ওই সময় তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি হতে দেয়া হয়নি।

“আমার সম্পর্কে লেখার আগে তোমাদের বুঝতে হবে, আমি যাই করি, আমার পার্টির জন্য করি। পার্টিকে টিকিয়ে রাখার জন্য করি। আমি না থাকলে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব থাকে না।”

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের ঘোষণার পেছনে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা ছিল না বলেও দাবি করেন এরশাদ।

তিনি বলেন, “কেউ কেউ এমন কথাও বলেছে, আমি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি টাকা নিইনি। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমি রাজনীতি করি না।”

এরশাদ বলেন, আগামীতে সব দল অংশ নিলে, পরিবেশ তৈরি হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে, তবে এই নির্বাচনে নয়।

“আমি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। এটাই আমার শেষ অবস্থান। তোমরা আমাকে নিয়ে আর বিদ্রুপ করে কিছু লেখালেখি কোরো না।”

নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বদলানোর পর নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ভবিষ্যত জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, “প্রয়োজন হলে তাদের প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। আমি এ বিষয়ে তোমাদের পরে জানাব।”