পথ কি খুলছে!

অপেক্ষায় ছিল গোটা জাতি, দুই নেত্রী কথা বলবেন। তারা কথা বলেছেন; কিন্তু যে আশায় বুক বেঁধেছিল সবাই, তাদের ৩৭ মিনিটের কথোপকথন তা ভরাতে পারেনি। রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসান ঘটবে, মেলেনি তেমন ইঙ্গিতও।

সৈয়দ বশিরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2013, 02:50 PM
Updated : 29 Oct 2013, 02:50 PM

দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার কথপোকথনের একটি রেকর্ড বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পেয়েছে এবং তার সত্যতাও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কথপোকথনের ৩৭ মিনিট সময়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চলে গেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের রেড টেলিফোন নিয়ে; যা, তার ভাষায়, নষ্ট হয়ে ছিল, অন্তত প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করার সময়।

শেখ হাসিনা বারবার বলতে চেয়েছেন, তিনি নিজেই টেলিফোন করেছেন এবং রিংয়ের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়া বলে গেছেন, যেখানে টেলিফোনই নষ্ট, সেখানে কিভাবে অন্যপাশে রিং শোনা যেতে পারে।

টেলিফোন নষ্ট থাকলে অন্য প্রান্তে ‘ফলস রিং’ শোনা যেতে পারে, কিন্তু খালেদা জিয়া তা মানতে চাননি।

টেলিফোনের পর তাদের কথপোকথনের বেশিরভাগ অংশজুড়ে ছিল সন্ত্রাসে মদদ দেয়া, সেটা রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে কিংবা দলীয় পর্যায় থেকে।

“সব মনে আছে। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা মনে আছে...” খালেদা জিয়া  প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সংঘটিত ওই ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

খালেদা জিয়ার উত্তর ছিল- “গ্রেনেড হামলা আপনারাই করিয়েছেন, আমরা করিনি, আপনারাই করেছেন। গ্রেনেড হামলার পেছনে আপনারা।”

এরপর আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাস ধরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে গেছেন তিনি।

যে সঙ্কট নিয়ে এই আলোচনার সূত্রপাত, তা নিয়ে কয়েক মিনিট কথা হয়েছে তাদের মধ্যে।

সেখানেও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের প্রশ্নে অনড় মনোভাব দেখিয়ে গেছেন বিরোধী নেত্রী। অন্যদিকে শেখ হাসিনাও বলে গেছেন তার প্রস্তাবিত সর্বদলীয় সরকারের কথা।

হরতাল তুলে নিতে বারবারই বিএনপি চেয়ারপারসনকে অনুরোধ করছিলেন শেখ হাসিনা।

আর এর জবাবে খালেদা জিয়া বলে গেছেন, এজন্য দেরি হয়ে গেছে। এখন ১৮ দলীয় জোটের সভা করে হরতাল প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভবপর নয়। 

“কর্মসূচি ঠিক হয়ে গেছে। ১৮ দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৮ দল পাব কোথায় এখন? এখন কেউ নেই। যেভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছেন।”

“এখন আমার দলের কোনো নেতাকে পাব না, স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতাদের পাব না, ১৮ দলের নেতাদের পাব না, কার সাথে কথা বলে আমি এটা প্রত্যাহার করব, আপনি বলেন?”

এরপরও শেখ হাসিনা অনুরোধ জানিয়ে যেতে থাকলে খালেদার জবাব আসে- “বলেন যে আপনি নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন, তাহলে আমি হরতাল ‍তুলে নেব।”

এরপর খালেদা জিয়াকে সাত বছর আগের কথা মনে করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

“যারা মাইনাস টু করেছিল, তাদের আবার সুযোগ দিতে চান কেন?”

কিন্তু খালেদা জিয়া ছিলেন আগের অবস্থানেই।

“আপনি যদি বলেন, এখন আপনি নিরপেক্ষ সরকারের জন্য রাজি আছেন.... আমি হরতাল উইথড্র করে নেব। আপনি বলেন....”

অনড় খালেদাকে তখন হাসিনা বলেন, “আপনি আলোচনায় আসেন। আপনি নিজের দলের লোকজনকেও ভরসা করতে পারেন না।”

“আমার লোকদের ওপর আমার ভরসা আছে। কিন্তু কিসের জন্য আপনাকে ভরসা করব। আপনাকে এ কথাটুকু বলতে হবে। আপনি ‍শুধু বলবেন দাবি মেনে নিলাম, আমি হরতাল ‍তুলে নেব।”

টেলিফোনের এই কথোপকথনে দুজনের যে অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে, তাই যদি বজায় থাকে, তাহলে মঙ্গলবারের পরও সংলাপ হলে সমঝোতার পথ খুলবে কি?

এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় এখন বাংলাদেশ।