সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ ‘হারিয়েছিলো’ হেফাজত

মতিঝিলে সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ হেফাজতে ইসলাম হারিয়ে ফেলেছিলো বলে পুলিশকে জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2013, 05:11 AM
Updated : 8 May 2013, 05:48 AM

“তিনি (বাবুনগরী) বলেছেন, ১৮ দলের জোটে থাকা নেতাকর্মীদের হাতে (হেফাজতের সঙ্গে যারা যুক্ত) এর নিয়ন্ত্রণ চলে যায়,” বলেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

গত রোববার ঢাকা অবরোধের পর মতিঝিলে অবস্থান নেয় হেফাজতকর্মীরা, রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সরিয়ে দেয়।

সমাবেশ চলার মধ্যে মতিঝিল থেকে পুরানা পল্টন পর্যন্ত এবং বায়তুল মোকাররম এলাকায় অসংখ্য দোকান ও গাড়ি পুড়িয়ে দেয়, আগুন দেয় বিভিন্ন ভবনে। এই সহিংসতায় নিহত হয় তিনজন।

গণজাগরণবিরোধী হেফাজতের এই তাণ্ডবে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির মদদ ছিলো, বলে আসছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

হেফাজতের এই কর্মসূচিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করে। হেফাজতকর্মীদের সহযোগিতার নির্দেশও দলীয় কর্মীদের দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।

মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের নেতা আব্দুল লতিফ নেজামীসহ ইসলামী ঐক্যজোটের বেশ কয়েকজন নেতা বক্তব্য রাখেন। এক মাস আগে মতিঝিলেই হেফাজতের সমাবেশে গিয়ে সংহতি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সাদেক হোসেন খোকা।

তাণ্ডবের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নয়দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে থাকা বাবুনগরীকে উদ্ধৃত করে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম মঙ্গলবার সাংবাদিকদের আরো বলেন, “মতিঝিলে তাদের অবস্থানের কোনো কর্মসূচি তাদের ছিলো না। তবে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা কিছু করতে পারেননি।”

হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফীকে বিষয়টি জানানো হয়েছিলো কি না- পুলিশ কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে চাইলে বাবুনগরী পুলিশকে জানান, তিনি (শফী) চোখে ভালো দেখতে পান না। তাকে ‘ভুল’ বোঝানো হয়েছিলো।

ঢাকায় থাকলেও মতিঝিলে রোববারের সমাবেশে ছিলেন না শফী। তবে সন্ধ্যায় হেফাজত নেতারা সমাবেশে বলেন, মতিঝিলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বলেছেন আমির।

সমাবেশে তখন বাবুনগরীসহ ইসলামী ঐক্যজোটের ওই নেতারাও ছিলেন, তবে রাতে অভিযানের সময় তাদের সেখানে দেখা যায়নি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, “পল্টন ও বায়তুল মোকাররমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হেফাজতকর্মীরা ছিলো না বলে দাবি করেছেন বাবুনগরী। তিনি বলেছেন, এই কাজ করেছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা।”

সোমবার রাতে বাবুনগরীকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার তাকে নয় দিনের হেফাজতে পায় পুলিশ।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে হাটহাজারী মাদ্রাসার এই শিক্ষক শুধু কাঁদছেন বলে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল জানান।

হেফাজতে ইসলামের মূল পরিকল্পনা, অর্থ যোগানদাতা, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস এবং সরকার ‘উৎখাতে’ কী পরিকল্পনা হয়েছিলো- তা জানতে বাবুনগরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

হেফাজতকে দেয়া অনুমতিপত্রে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু এরপর সরকারের বারবার আহ্বান সত্ত্বেও অবস্থান ছাড়েছিলো না তারা।

পুলিশ বলছে, ওই সমাবেশ থেকে সচিবালয়ে হামলাসহ নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। এজন্য তাদের তোলার পদক্ষেপ নেয়া হয়।