‘গণতন্ত্রের অগ্রসৈনিক ছিলেন মজিদ-উল হক’

দীর্ঘ সময় পর নব্বইয়ে যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রা শুরু হয়, তাতে সদ্যপ্রয়াত মজিদ-উল হকের অবদান স্মরণ করেছেন সেই সময়ের রাজনীতিকরা।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2013, 05:17 AM
Updated : 26 March 2013, 05:19 AM

বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন এই নেতা গত সোমবার ৮৭ বছর বয়সে মারা যান।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যে দুজন বাঙালি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছিলেন তাদের একজন হলেন মজিদ-উল হক, যাকে জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে এনেছিলেন।

জিয়ার মৃত্যুর পর গৃহবধূ খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মজিদ-উল হকের। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার।

বিএনপির সেই সময়ের নেতা ও ঢাকার প্রথম মেয়র ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দল যে সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, তার পেছনে যে কজন ছিলেন, জেনারেল মজিদ-উল হক তাদের অন্যতম।”

“অদম্য সাহসী ও নিষ্ঠাবান এই মানুষটির অবদানের কথা অবশ্যই গণতন্ত্রের ইতিহাসে থাকা উচিৎ।”

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে মজিদ-উল হকের ভূমিকা স্মরণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বর্তমান সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

“কখন কোন কর্মসূচি দেয়া উচিত, সে বিষয়ে মজিদ-উল হকের স্পষ্ট ও স্বচ্ছ ধারণা ছিল।”

তিনি জানান, ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া তিন জোটের লিয়াজোঁ কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দেন আবদুল সালাম তালুকদারকে। মজিদ-উল হক ওই কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।

বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক এহসানুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন, তখন মজিদ-উল হকই এরশাদের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নেন।

পরে ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি এবং সেই থেকে খালেদা জিয়াকে ‘আপসহীন’ অভিহিত করে আসছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।

প্রয়াত মজিদ-উল হকের হকের পরিবারের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

মজিদ-উল হকের মৃত্যুর খবর শুনে সোমবার রাতে তার বাড়িতে যান খালেদা জিয়া, সান্ত্বনা দেন পরিবারের সদস্যদের।

সাবেক স্পিকার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নব্বইয়ের আন্দোলনকে বেগবান করে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করতে তার ভূমিকা প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে মজিদ-উল হককে ‘সাহসী ব্যক্তি’ অভিহিত করেন।

জিয়ার সরকারের থাকা মজিদ-উল হক ৯১-এ খালেদা জিয়ার সরকারের কৃষি ও পানিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি।

মোশাররফ বলেন, “ধীর, স্থির, কর্তব্যনিষ্ঠ এই মানুষটি কেন পরে দল থেকে সরে গেলেন, তা আমার জানা নেই।”

মজিদ-উল হককে ‘সাদা মানুষ’ অভিহিত করে আবুল হাসনাত বলেন, অসম্ভব মেধাবী এই মানুষটি কর্মজীবনে যেমন সততার সঙ্গে কাজ করেছেন, তেমনি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও সমভাবে অবদান রেখে গেছেন।”

মজিদ-উল হকের পেশাগত জীবনের সাফল্য তুলে ধরে সাবেক সেনাপ্রধান এবং বর্তমানে বিএনপির নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, “স্যার ছিলেন, একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ জেনারেল। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন উচ্চ পদে নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।”

তিনি জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মজিদ-উল হকসহ দুজন বাঙালি কর্মকর্তা মেজর জেনারেল পদে আসীন হন।

রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর ১৯৭৯ এবং ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে মাগুরা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মজিদ-উল হক।