বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন এই নেতা গত সোমবার ৮৭ বছর বয়সে মারা যান।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যে দুজন বাঙালি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছিলেন তাদের একজন হলেন মজিদ-উল হক, যাকে জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে এনেছিলেন।
জিয়ার মৃত্যুর পর গৃহবধূ খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মজিদ-উল হকের। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার।
বিএনপির সেই সময়ের নেতা ও ঢাকার প্রথম মেয়র ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দল যে সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, তার পেছনে যে কজন ছিলেন, জেনারেল মজিদ-উল হক তাদের অন্যতম।”
“অদম্য সাহসী ও নিষ্ঠাবান এই মানুষটির অবদানের কথা অবশ্যই গণতন্ত্রের ইতিহাসে থাকা উচিৎ।”
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে মজিদ-উল হকের ভূমিকা স্মরণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বর্তমান সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
“কখন কোন কর্মসূচি দেয়া উচিত, সে বিষয়ে মজিদ-উল হকের স্পষ্ট ও স্বচ্ছ ধারণা ছিল।”
তিনি জানান, ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া তিন জোটের লিয়াজোঁ কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দেন আবদুল সালাম তালুকদারকে। মজিদ-উল হক ওই কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।
বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক এহসানুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন, তখন মজিদ-উল হকই এরশাদের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নেন।
পরে ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি এবং সেই থেকে খালেদা জিয়াকে ‘আপসহীন’ অভিহিত করে আসছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
সাবেক স্পিকার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নব্বইয়ের আন্দোলনকে বেগবান করে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করতে তার ভূমিকা প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে মজিদ-উল হককে ‘সাহসী ব্যক্তি’ অভিহিত করেন।
জিয়ার সরকারের থাকা মজিদ-উল হক ৯১-এ খালেদা জিয়ার সরকারের কৃষি ও পানিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি।
মোশাররফ বলেন, “ধীর, স্থির, কর্তব্যনিষ্ঠ এই মানুষটি কেন পরে দল থেকে সরে গেলেন, তা আমার জানা নেই।”
মজিদ-উল হককে ‘সাদা মানুষ’ অভিহিত করে আবুল হাসনাত বলেন, অসম্ভব মেধাবী এই মানুষটি কর্মজীবনে যেমন সততার সঙ্গে কাজ করেছেন, তেমনি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও সমভাবে অবদান রেখে গেছেন।”
মজিদ-উল হকের পেশাগত জীবনের সাফল্য তুলে ধরে সাবেক সেনাপ্রধান এবং বর্তমানে বিএনপির নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, “স্যার ছিলেন, একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ জেনারেল। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন উচ্চ পদে নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।”
তিনি জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মজিদ-উল হকসহ দুজন বাঙালি কর্মকর্তা মেজর জেনারেল পদে আসীন হন।
রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর ১৯৭৯ এবং ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে মাগুরা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মজিদ-উল হক।