ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রস্তাব উপেক্ষা করে দশম সংসদ নির্বাচনে এখনকার ৮৭টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 06 Feb 2013, 11:29 AM
বুধবার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের যে খসড়া কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় অন্তত ৮৭টি সংসদীয় আসনের সীমানা অষ্টম সংসদের মতোই হচ্ছে।
খসড়ায় নবম সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৮৭টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব বিশ্বাস লুৎফুর রহমান।
সিইসি কাজী রকিব বলেন, নতুন সীমানার বিষয়ে ১০ মার্চের মধ্যে দাবি-আপত্তি জানাতে হবে।
সব দাবি-আপত্তি সমাধানের পর এই আসন সীমানা চূড়ান্ত হবে। এজন্য ইসির হাতে সময় বেশি নেই, কারণ এই বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে দশম সংসদ নির্বাচন হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারো ইসিকে আইনি জটিলতা সামলাতে হবে। গেল বছর বিভাগওয়ারি শুনানিতে প্রায় ৩ হাজার ৬০০টি আবেদন জমা পড়ে।
আসন সীমানা নিয়ে ইসির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোট শরিক নবম সংসদের আসন সীমানা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছিল।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার শরিকরা কোনো মতামত দেয়নি। তবে বিরোধী দলের অনেক নেতা অষ্টম সংসদের সীমানা ফিরিয়ে আনার দাবি করে আসছিল।
নবম সংসদে এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন সর্বশেষ আদম শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার আনুপাতিক হার মেনে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে জিআইএস পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যাপক পরিবর্তন আনে সংসদীয় আসনে।
তবে নতুন ইসি জনসংখ্যার বিভাজনকে তেমন প্রাধান্য না দিয়ে ছয় নীতি অনুসরণে সীমানা পুননির্ধারণের খসড়া তৈরি করেছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবার ইসি প্রস্তাবিত এসব আসনের অন্তত ৩৩টি আসনই অষ্টম সংসদের সীমানাই বহাল রয়েছে। এছাড়া আরো অনেক আসনে ২০০১ সালের সীমানার কাছাকাছি অবস্থানে ফেরার প্রস্তাব রয়েছে।
এগুলো হলো- কুড়িগ্রাম-২, বগুড়া-১, বগুড়া-৫, যশোর-৬, খুলনা-১, খুলনা-৪, খুলনা-৬, পটুয়াখালী-১, পটুয়াখালী-২, পিরোজপুর-৩, টাংগাইল-৫, টাংগাইল-৬, জামালপুর-৪, জামালপুর-৫, ময়মনসিংহ-৩, ময়মনসিংহ-৪, নেত্রকোণা-২, ঢাকা-১, ঢাকা-২, ঢাকা-৩, নরসিংদী-১, নরসিংদী-২, নরসিংদী-৩, নরসিংদী-৫, ফরিদপুর-২, নারায়ণগঞ্জ-৫, সুনামগঞ্জ-৫, সিলেট-২, মৌলভীবাজার-২, মৌলভীবাজার-৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬।
এবার ইসি ২৮টি জেলার ৮৭টি আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করে। জেলাগুলো হচ্ছে- রংপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাৎদপুর, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম।
জেলার আসন সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন আনেনি ইসি। অর্থাৎ একটি জেলায় যে সংখ্যক আসন গতবার ছিল, এবারো তাই থাকছে।
ইসি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সীমানা পুঙ্খনাপুঙ্খ করতে আধুনিক প্রযুক্তির জিআইএস পদ্ধতি এবার ব্যবহার হয়নি।
এ বিষয়ে সাবেক সিইসি শামসুল হুদা বলেন, জনসংখ্যা অনুপাতে খুব স্বল্প সময়ে নিখুঁত সীমানা নির্ধারণে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল সার্ভিস (সিইজিআইএস) এর শরণাপন্ন হয়েছিল ইসি।
“এ কমিশনও তাদের সহায়তা নিলে ভালো হয়।”
সাবেক সিইসি বলেন, “সীমানা পুনর্নির্ধারণে ইসি কারো মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সাংবিধানিকভাবে এটা ইসির ক্ষমতা, সঠিকভাবেই তা করতে হবে।”
তা হলো- প্রতিটি জেলার ২০০৮ সালের মোট আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা, আগের নির্ধারিত সীমনা যতদূর সম্ভব বহাল রাখা, সংসদীয় আসনের এলাকা অন্য জেলায় সম্প্রসারণ না করা, যতদূর সম্ভব উপজেলা অবিভাজিত রাখা, ইউনিয়ন/সিটি/পৌর ওয়ার্ড বিভাজন না করা এবং জনগণের যাতায়াতের সুবিধা অনুসরণ করা।
সাংবিধানে প্রশাসনিক সুবিধা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জনসংখ্যার বিভাজনকে যতদূর সম্ভব বিবেচনায় নিয়ে আসনের সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কথা রয়েছে।
গত নয়টি সংসদ নির্বাচনে ১৯৮৪, ১৯৯১ সালের পর সর্বশেষ ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়।